২০৪১ সালে বিজিবির সদস্য হবে ৯২ হাজার: প্রধানমন্ত্রী

fec-image

২০৪১ সালের মধ্যে বিজিবির সদস্য ৯২ হাজারে উন্নীত করা হবে। ‘আপনারা দেশপ্রেম, সততা এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। একটি কথা মনে রাখতে হবে— শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড শৃঙ্খলা বাহিনীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না; তাতে নিজেদেরই ক্ষতি হবে, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন। কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলা প্রতিটা শৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্যই কর্তব্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলে।

রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিজিবি দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজিবি সদর দফতর পিলখানায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা গ্রহণের এক মাসের মাথায় বিডিআরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যদিও ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা তা সমাধান করি। কিন্তু সেই ঘটনায় তখনকার বিডিআরের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭০ জন প্রাণ হারায়। এই ঘটনায় আমরা দ্রুততম সময়ে বিচারও সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। বিচার কার্য… তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে।’

স্বাধীনতার পরে বিজিবি পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সালে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড আইন-২০১০ পাস করি। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের ওই ঘটনার পরে আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল- যে, বিডিআরকে নতুনভাবে নাম দিয়ে একটা আইন পাস করা।

বিডিআরকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিজিবি এখন জল, স্থল এবং আকাশপথে দায়িত্বপালনে সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিজিবির জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় আরেকটি ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ সৃজনের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানান সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও সীমান্তে চোরাচালান, মাদকপাচার, নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, এটা প্রশংসনীয়। গত এক বছরে তাদের অভিযানে ৮৫০ কোটি টাকার মূল্যের মাদক এবং ৬০০ কোটি টাকার চোরাচালানি মালামাল আটক করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা প্রত্যাশিত আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসাবে বিজিবি এগিয়ে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ইপিআরের (বর্তমানে বিজিবি) অবদানের কথা স্মরণ করে সরকার প্রধান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। এর সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন পিলখানায় পূর্বপ্রস্তুতি ছিল। সেখানে ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিন জন ওয়ারলেস সেট নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন জাতির পিতার নির্দেশে। যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে ইপিআরের ফাঁড়িতে পাঠান। তখন তারা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন এবং থানায় এই বার্তাটা পৌঁছে দেন। সেই বার্তাটা সংগ্রাম পরিষদ তথা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এভাবে আমাদের স্বাধীনতার বার্তাটা সমগ্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়। সেখানে আমাদের নেতারা প্রচার শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ দুপুর আড়াইটায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান সাহেব প্রথমে এই ঘোষণাটা পাঠ করেন। সেই সঙ্গে একের পর এক অন্য নেতারাও পাঠ করতে থাকেন। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ শুরু এবং স্বাধীনতা ঘোষণায় বিজিবির বিশাল অবদান রয়েছে। যা আমরা সবসময় স্মরণ করি।

আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদেরকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা লক্ষ্যস্থির করেছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে। আমরা এই ব-দ্বীপ উন্নয়নের জন্য ২১০০ পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত, সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন