নির্দেশনার পরেও রোহিঙ্গাদের হাতে মুঠোফোন

fec-image

কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের উপর মুঠোফোন ব্যবহারের নির্দেশনার পরেও বন্ধ নেই। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে কেউ কেউ প্রকাশ্যে ব্যবহার করলেও অনেকে লুকিয়ে ব্যবহার করছে।

সরকারের নির্দেশনার পর গত মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গা শিবির ও আশপাশ এলাকায় নেটওয়ার্ক সীমিত করেছে। দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন সেবা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ অপরাধসহ নানা অপকর্ম জড়াচ্ছে পালিয়ে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, হত্যা, ডাকাতি ও তথ্য পাচারসহ সর্বশেষ প্রত্যাবাসন ও মহাসমাবেশ। সামাজিক ও পারিবারিক শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন টেকনাফ ও উখিয়ার একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেখা যায়, এন্ড্রয়েড সেটের মাধ্যমে গান শুনছে, কেউ কেউ ভিডিও কল দিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলছে, আবার কেউ কেউ ছোট মুঠোফোনে আলাপন করতে দেখা গেছে। মুঠোফোন ব্যবহারে বাদ যায়নি উঠতি বয়সের তরুন-তরুনীরা। তারা দেদারছে ভিডিও গেমস, ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবার ও মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ে মগ্ন হয়ে অলস সময় পার করছে। এসময় সাংবাদিকদের দেখে হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ে অনেকে। অনেকে তাড়াহুড়ো করে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

এব্যপারে টেকনাফের শালবন (ক্যাম্প নং- ২৬) এর একাধিক রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সাথে কথা বললে জানান, মুঠোফোন ব্যবহার না করার বিষয়ে কেউ তাদের অবগত করেনি। তবে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তারা জানান, মুঠোফোন ব্যবহার বন্ধ করা হলে বিদেশ ও বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী আত্মীয় স্বজনের খবরা খবর নিতে অসুবিধা সৃষ্টি হবে। অপর এক পশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা জানান, মুঠোফোনে সিমটি তারা ব্যবহার করলেও এসব সিম কার নামে নিবন্ধিত, তা তারা জানেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত বেশীর ভাগ সিম ‘রবি’ কোম্পানীর। এরপর ‘গ্রামীন, এয়ারটেল, বাংলালিংক’ কোম্পানীর সিম রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কোথাও কোথাও দুর্বল নেটওয়ার্ক হলেও প্রায় ক্যাম্পে পাওয়া যায়। এই মুঠোফোন ও মুঠোফোনে অ্যাপ্স ব্যবহারের মাধ্যমে ভয়াবহ অপরাধসহ নানা অপকর্ম জড়াচ্ছে পালিয়ে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, হত্যা, ডাকাতি ও তথ্য পাচারসহ সর্বশেষ প্রত্যাবাসন ও মহাসমাবেশ।

এছাড়াও মুঠোফোনের মাধ্যমে উঠতি কিশোর, তরুন-তরুনী ও যুবক-যুবতীদের সামাজিক অবক্ষয় এবং অপরাধ অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে স্থানীয়দের সাথে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা মাধ্যমে বিয়ে করারও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের কাছে মোবাইল ফোন সিম কার্ড বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। রোহিঙ্গা শিবির ও আশেপাশের এলাকায় প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ফোর-জি এবং থ্রি-জি মোবাইল সেবা বন্ধ থাকবে। বন্ধ করা হলে রোহিঙ্গারা ওই সময়ে ইন্টারনেট সেবা পাবে না।

এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ১৫০টি মোবাইল ফোন টাওয়ারের ক্ষমতা কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মোবাইল কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে পারবে না এবং রাখাইনে যোগাযোগ করতে পারবে না বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির জানান, মুঠোফোন ব্যবহারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা তরুন-তরুনীরা নানা পন্থায় স্থানীয়দের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার চেষ্টা করছে। অনেকে অবৈধ কাজে যুক্ত হয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট হয়ে গেছে। মুঠোফোন যোগাযোগের কারণে অনেকে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি করছে। ঘরে বউ রেখে রোহিঙ্গারা যে কোন মুল্যে হোস্ট কমিউনিটির মেয়ে-ছেলে বিবাহ করছে। এর ফলে সামাজিক ও পারিবারিক শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুঠোফোন ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে নির্দেশনা পেয়েছি। এব্যাপারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি যারা বিভিন্ন অপারেটর রয়েছে তাদের মোবাইল সিম বিক্রি না করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন