মাটিরাঙ্গায় চলছে বাল্য বিবাহ আর ভাঙছে সংসার
মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
খাগাছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে বাল্য বিবাহ আর ভাঙছে নতুন কোন সংসার। কারো কারো হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই ঘটছে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও। বাল্যবিবাহের কারনে সর্বশেষ আত্মহত্যার বলি হয়েছে মাটিরাঙ্গার বড়নালের কিশোরী গৃহবধু মাসুদা বেগম। স্বামী-শশুরের যৌতুকের দাবী পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বিয়ের দুই মাসের মাথায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছে কিশোরী গৃহবধু মাসুদা বেগম।
উপজেলার বিভিন্ন জনপদে প্রতিদিনই চলছে কোন না কোন গ্রামে স্কুলের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীর বিয়ে। পিতা-মাতার দারিদ্রতার সুযোগে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ কর্তা ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে বাল্য বিবাহ আয়োজন করলেও প্রশাসনের কোন ভুমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলার উত্তরের ইউনিয়নগুলো। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিদিনই ঘটছে বাল্যবিবাহের মতো অপরাধ।
মাটিরাঙ্গায় বাল্য বিবাহের সর্বশেষ শিকার হয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন বেলছড়ি ইউনিয়নের আমবাগান গ্রামের দরিদ্র ফরিদ মিয়া‘র ১৩ বছরের কিশোরী স্কুল পড়ুয়া কুলসুমা আকতার। মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ শিক্ষার্থীর অসম বিয়ে হয়েছে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর মন্দিয়া গ্রামের আসকর বাড়ীর ষাটোর্ধ মো: মনির হোসেন এর সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মুখরোচক আলোচনা চললেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলছেনা সাধারন মানুষ।
শুধু কিশোরীরাই বাল্য বিবাহের শিকার হচ্ছেনা সাথে সাথে যৌতুকের বলিও হচ্ছে অনেক অসহায় পিতা-মাতা। অপর দিকে বাল্য বিবাহ জনিত কারণে কলহের সৃষ্টির জের ধরে অনেক কিশোরী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে বলেও জানা যায়। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হর হামেসাই বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের শিকার হচ্ছে অনেক কিশোর-কিশোরী। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত দুই মাসে উপজেলার খুব কাছাকাছি বেলছড়ির আমবাগান গ্রামে পাঁচটি বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। যাদের বেশীর ভাগেরই বয়স ১৫ বছরেরও কম।
১৮ বছরের নীচে কন্যা সন্তান বিয়ে দেয়া এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ে করানো দেশের প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। তবুও বাল্য বিবাহের মহোৎসব চলছে মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়েন এমন অভিযোগ রয়েছে সচেতন মহল থেকে। তাদের অভিযোগ বিবাহ রেজিষ্টার কাজীরা টু’পাইস কামানোর জন্যই এহেন অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেতন মহল এ ধরনের কর্মকান্ডে জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।