উখিয়ায় কাজ না করেই কোটি টাকা লুঠপাটের অভিযোগ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ায় এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক এডিবির অর্থায়নে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প কাজ সম্পন্ন না করেই বিল ও জামানত পরিশোধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব লুঠপাট এলজিইডির বিদায়ী উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজশে হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

এডিবির কারিগরি পরামর্শক টিম সম্প্রতি এসব অনিয়ম ও দূর্নীতি সরজমিনে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। দূর্নীতি ও চুরির কারণে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ কিঃমিঃ খাল খনন ও খাল পাড়ে পরিবেশ রক্ষায় প্রায় চার লক্ষ গাছের চারা রোপন, পরিচর্যা প্রকল্পে উন্নয়নের সফলতার সুফল প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও একটি এইচবিবি সড়ক নির্মাণেও এলজিইডি উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মিলে কাজ না করেই লুঠে নিয়েছে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা।

উখিয়া উপজেলা এলজিইডি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী মেগা ক্যাম্প অভ্যন্তরে বয়ে চলা ১১ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ২টি খাল সংস্কার কাজ করা হয় যাচ্ছেতাইভাবে। কাগজে পত্রে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও উক্ত কাজের গুণগত মান ও স্থায়ীত্ব নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করেই প্রায় আড়াই কোটি টাকা নয় ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।

১১ কিঃমিঃ খালের বিদ্যমান তলদেশ হতে ১ মিটার বা সাড়ে ৩ ফুটের মত খনন করা, ভাঙ্গনরোধে খালের দুই পাড়ে সিসি ব্লক বসানো ও সংস্কারকৃত খালের দুই পাড়ে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্য ঔষধি ও দেশি বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপনসহ পরিচর্যা করন কাজ বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্ত এলাকাবাসী এডিবির অর্থায়নে গৃহীত উক্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন।

এলাকার লোকজন অভিযোগ করে জানান, অনেকাংশে সিডিউলে বর্ণিত নির্ধারিত গভীরতায় না কেটে দায়সারাভাবে লোক দেখানো খাল কাটা হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে খালের তীরের দুইপাশে কম পুরুত্বের, নিম্নমানের সিসি ব্লক বা স্ল্যাব বসানো হয়েছে। যা সংস্কারের কয়েক মাসের মাথায় অধিকাংশ স্হানে ভেঙে পড়ে পাকা স্ল্যাব বা ব্লকগুলো।

সম্প্রতি এলজিইডির উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম নিজে ঠিকাদারের হয়ে রোহিঙ্গা লেবার দিয়ে ভাঙন স্হানে বালির বস্তা দিয়ে মেরামতের অপচেষ্টা করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। খাল সংস্কারের সময় এলজিইডিকে অনিয়মের অভিযোগ করলেও উক্ত প্রকৌশলী কোন ব্যবস্হা নেননি বলে জানান স্হানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোনা আলীসহ এলাকার অনেকে।

খালপাড়ে বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যাকরন সংস্কার কাজের অংশ হলেও তিনি প্রায় ৪ লক্ষ গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা না করেই কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল পরিশোধ করেছেন। এডিবির অর্থায়নে খাল সংস্কার কাজের ভাঙ্গা মেরামত ও কোন গাছের চারা রোপন না করেই সম্প্রতি জামাতের প্রায় আড়াই কোটি টাকা ছাড় করার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এব্যাপারে উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম খাল সংস্কার কাজে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার পরও ঠিকাদারকে বিল ও জামানত পরিশোধের সঠিক তথ্য এড়িয়ে যান তিনি।

এদিকে ইএমসিআরপি প্রকল্পের ডব্লিউ ১৪নং প্যাকেজের ২ নাম্বার প্রকল্পের কাজও সম্পন্ন না করেই অতিরিক্ত ১০ লক্ষাধিক টাকা ছাড়ের অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রকল্পে “১৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প তাজনিমারখোলা ফুটবল খেলার মাঠ হতে ২০ নাম্বার ক্যাম্প পর্যন্ত ২ কিঃমিঃ এইচবিবি” দ্বারা সড়ক নির্মাণ কাজের সাড়ে ৭ শত মিটার করে ১৫ শত মিটারের বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে।

অথচ ওই সড়কে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আর্মি কর্তৃক নির্মিত কাটাতারের বেড়া থাকায় প্রায় ১ কিঃমিঃ কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ২৪/৫/২০২১ ইং ৫০৩নং স্মারক মূলে এলজিইডির কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দিয়ে জানান উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম। এ ব্যাপারে এলজিইডির উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কাজ না করে অতিরিক্ত বিল পরিশোধের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উক্ত কাজ চলমান রয়েছে। কাজ করতে না পারার চিঠির কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন