রাঙামাটির লংগদুতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আগুন দেওয়া হয়েছে: অভিযোগ ত্রান কমিটির
নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
রাঙামাটির লংগদুতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের সহযোগিতায় পাহাড়ি গ্রামে আগুন দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ করে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এধরনের হামলা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
সোমবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের একটি রেস্টুরেন্টে রাঙামাটির লংগদুর ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে রাঙামাটির লংগদুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনসহ ৬দফার দাবি জাননো হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, লংগদু ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা ও সমাজকর্মী ধীমান খীসা।
সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধৃুতি দিয়ে অভিযোগ করা হয়, ১ জুন খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা সড়কের ৪ মাইল এলাকায় নুরুল ইসলাম নয়ন নামে লংগদুর উপজেলার বাসিন্দা মোটর সাইকেল চালকের লাশ পাওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে ২জুন রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় তিনটি পাহাড়ি গ্রামে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা ধরে একের পর এক প্রায় ২২৪টির অধিক বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে পুরোপুরি সর্বস্বহারা করা হয়।
এ সময় প্রশাসন আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের বাধাই প্রদান করেনি। বরং হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল হামলাকারীদের পাশে বা সাথে সাথে ছিল। হামলার সময় তাদের ভূমিকা হামলাকারীদের সক্রিয়ভাবেই প্ররোচনা করার মতো ছিল। এছাড়া হামলাকারীদের হাতে গানপাউডারসহ স্প্রে করার শিশি বা বোতলে বহনযোগ্য জাতীয় দাহ্য পদার্থ ও হাতে পেট্রোল ও আগুন লাগানোর উপাদান বা বস্তু ছিলো।
সাংবাদিক সম্মেলনে লংগদুর হামলার বিচার বিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্ত, লংগদুর হামলার উস্কানিদাতাদের বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা, হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, পাহাড়িদের নিজের জায়গায় নিরাপদে ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া, দেশের অন্যান্য অংশের মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও জুম্ম জনগণের অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা, লংগদুতে তিন পাহাড়ি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে পরিপূর্ণ ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
লংগদু ঘটনা নিয়ে সরকারের স্বেতপত্র প্রকাশ করা, সরকারের মধ্যে থেকে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের অপরাধ উন্মোচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ক্ষতিগ্রস্তদের যৌক্তিক শর্ত পূরণপূর্বক যথাযথ ক্ষতিপূরণ সহকারে নিজ জায়গায় পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা ও ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের হামলার শিকার হতে না হয় তার জন্য নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
১জুন দুপুরে খাগড়াছড়ির চার মাইল এলাকা থেকে রাঙমাটির লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার হয়। এঘটনার জেরে ২জুন লংগদুর তিনটিলা, মানিকজোড় ছড়া ও বাইট্যাপাড়া এলাকায় ২১২টি পাহাড়ি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। নয়নের ছোট ভাই দীন ইসলাম লিটন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন।
এদিকে শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি পুলিশ ও পিবিআই নয়ন হত্যার আসামী জুনেল চাকমাকে (১৯) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে রুমেল চাকমাকে গ্রেফতারের পর দু’জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল খাগড়াছড়ির মাইনী নদীতে টানা প্রায় ৫ঘন্টা অভিযান চালিয়ে নয়নের মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। রবিবার গ্রেফতাকৃত জুনেল চাকমা ও রুনেল চাকমা খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।