বাইশারীর বৃহৎ রাবার শিল্পে ফের শ্রমিক অসন্তোষ

Rabar pic- Baisari

মো.আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

দেশের বেসরকারী খাতে বৃহৎ রাবার উৎপাদন অধ্যুষিত এলাকা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে ফের শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার উপেক্ষা করে দেশে রাবারের দর পতনের কারণে ব্যক্তি মালিকানাধীন উৎপাদিত রাবার বাগান বন্ধ ও বড় বাগান গুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এতে রাবার শিল্পে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে অধিকাংশ বড় কোম্পানীর রাবার বাগানে উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগে কোম্পানীর পক্ষ থেকে সিনিয়র শ্রমিকদের ছাটাই করছে। যার প্রভাব আশপাশের বাগানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিদিন। বিগত দিনেও শ্রমিকদের ছাটাই করার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল রাবার বাগান মালিকদের।

জানা গেছে, বাইশারী ইউনিয়নে কবির কোম্পানী রাবার বাগান, নাজমা খাতুন রাবার এস্টেট এর ৬নং ব্লক, অপরাজিতা রাবার বাগান ও পারভেজ রাবার প্লান্টার্স এ শ্রমিক ছাটাই ও অতিরিক্ত কাজ আদায় করায় শ্রমিকদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অধিকাংশ বাগান ব্যবস্থাপক নিজেদেরকে বাগান মালিকদের সুনজরে রাখার লক্ষ্যে শ্রমিকদের উপর এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি অতিরিক্ত কাজ আদায়ের জন্য শ্রমিকদের উপর চাপ প্রয়োগ করলে বাইশারীর নাজমা খাতুন রাবার এস্টেট রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর মৌখিক অভিযোগও প্রদান করেন বাগান ব্যবস্থাপক।

জানা যায়, রাবারের দর পতনের কারণে বর্তমানে শ্রমিকদের বেতন প্রদান করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে রাবার বাগান মালিকদের। আবার বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখার চেষ্টা করছে। এতে বাগান ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে।

বাইশারী এলাকার একাধিক রাবার বাগান শ্রমিকরা জানান, অতিতে তাদেরকে বছরে দুই বার ইউনিফর্ম প্রদান করলেও বর্তমানে ইউনিফর্ম না দেয়ায় বাগানে কাজ করতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে এবং নির্ধারিত সময়ের পর বাগান ব্যবস্থাপকরা জোর করে বিনিময় ছাড়াই বাগানের অতিরিক্ত কাজ আদায় করার চেষ্টা করে।

এছাড়াও কবির কোম্পানীর রাবার বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত টেপার পদে কাজ করে আসছিলেন সোনা মিয়া, মোঃ কাশেম ও শাহাব উদ্দিন। এই তিনজনকে সম্প্রতি কোন কারণ ছাড়াই ছাটাই করা হয়েছে। বাগান ব্যবস্থাপক মোঃ জামাল শ্রমিক ছাটাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রণীত শ্রম আইন মানছেনা মালিক পক্ষ।

নাজমা খাতুন রাবার এস্টেটের ব্যবস্থাপক আল-আমিন বলেন, রাবার গাছে আঘাতের কারণে কস কমে যাওয়ায় গাছে গোবর লাগানো প্রয়োজন। শ্রমিকদেরকে গোবর লাগানোর জন্য বললে শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজন অন্যান্য শ্রমিকদের নানা রকম উস্কানীর মাধ্যমে গোবর দেয়া বন্ধ করে দেয়। মূলত কয়েকজন উশৃঙ্খল শ্রমিকদের কারণে রাবার বাগানে সমস্যা হয়ে থাকে। তবে এ নিয়ে শ্রমিকদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে এবং তারা রাবার গাছে বর্তমানে গোবর লাগাচ্ছে।

রাবার শ্রমিক নেতা আব্দুর রশিদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপকরা শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ আদায় এবং নিয়ম বহির্ভূত শ্রমিক ছাটাই করার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাবারের দাম কমে যাওয়ার কারণে এই মুহুর্তে শ্রমিকদের অন্যায় দাবী গ্রহণযোগ্য নয় এবং আমরা অতিতের ঘটনার পূনরাবৃত্তি চায় না এবং এসব ঘটনার মিমাংসার চেষ্টা চলছে। তবে শ্রমিক ছাটাইয়ের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানালেন শ্রমিক নেতা আব্দুর রশিদ।

উল্লেখ্য ২০০৮ সনে ৫জানুয়ারী বাইশারী রাবার শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে বাচ্চু মিয়া নামে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা যান। উত্তেজিত উশৃঙ্খল বহিরাগত শ্রমিকদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে জ্বলেছে রাবার বাগানের কোয়ার্টার গুলো। এ অসন্তোষের জের ধরে মামলায় সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদেরও জড়ানোর কারণে তৎসময়ে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন