রোহিঙ্গা ইস্যুতে কি মুখ খুলবেন ট্রাম্প

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বৃহস্পতিবার আরও কয়েকশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গারা যখন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে, তখন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি আঞ্চলিক একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ভিয়েতনাম রওনা দিচ্ছেন।

এরপর তিনি ফিলিপাইনে যাবেন আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে। অ্যাপেক ও আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত হবেন ১২ দিনের এশিয়া সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। সম্মেলনে দুই নেতার পার্শ্ব বৈঠকের কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে, আশা করা হচ্ছে, সম্মেলনে তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। সম্ভাব্য সেই সাক্ষাৎকে সামনে রেখে জোরালোভাবে একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। তা হলো, সু চির সঙ্গে সাক্ষাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ট্রাম্প মুখ খুলবেন কিনা। এশিয়া সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও কোনও বক্তব্য দেননি

গত ২০ বছরের মধ্যে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের দীর্ঘতম এশিয়া সফরে রয়েছেন ট্রাম্প। তার এই সফরে উত্তর কোরিয়ার হুমকি ও বাণিজ্য প্রধান ইস্যু হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তবে এখনপর্যন্ত তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনও বক্তব্য দেননি। বিশেষ করে রাখাইনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সমালোচনা, নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি। ফলে অনেকেই আশা করছেন অ্যাপেক সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখ খুলবেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার জানান, ৩-১৪ নভেম্বরের এশিয়া সফরে ট্রাম্প ‘স্বাধীনতা ও ব্যক্তি অধিকারের’ গুরুত্বের বিষয়ে কথা বলবেন।

সাংবাদিকরা ম্যাক মাস্টারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলার মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেন কিন্তু কেন তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিয়ে কোনও সমালোচনা করেন না। জবাবে তিনি বলেন, এসব সংকট নিয়ে চিৎকার করলে কী উপকার হবে? সাম্প্রতিক ইতিহাসে এসব সমালোচনা কোনও কাজে লাগেনি। প্রেসিডেন্ট যা করছেন তা কার্যকর।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান দেশটির বেশ কয়েকজন কূটনীতিককে হতাশ করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই হতাশা ব্যক্ত করেছেন ওয়াশিংটন ও এশীয় দেশগুলোর রাজধানীতে অবস্থান করা বেশ কয়েকজন কূটনীতিক।

ম্যাকমাস্টার জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্প এসব ইস্যু সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে নীরবে মোকাবিলা করতে চান। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে এখন হোয়াইট হাউস আগের মতো নেই, যেমন ছিল বারাক ওবামার আমলে। ওবামা তার সময়ে মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু এখন আমরা হোয়াইটহাউসের পক্ষ থেকে তেমন কোনও বক্তব্য পাই না।

ডেমোক্র্যাটিক দলের আইন প্রণেতাসহ ট্রাম্পের সমালোচকরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। জাতিসংঘ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করলেও যুক্তরাষ্ট্র কোনও বক্তব্যে এই সংজ্ঞা ব্যবহার করেনি।

চলমান রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ছয় লাখের বেশি মানুষ রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তাদের একজন শীর্ষ প্রতিনিধি দেশটিতে সফর করবেন এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই ১৫ নভেম্বর মিয়ানমার সফর করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ট্রাম্প নয়, হয়তো টিলারসনই এশিয়া সফরে কথা বলবেন।

২ নভেম্বর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ট্রাম্পের কাছে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে সংস্থাটির বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের এ বিষয়ে অবস্থান নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গণহত্যা আখ্যায়িত করে পদপেক্ষ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যানরাইটস ওয়াচ চলমান সংকটকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এমন কোনও অবস্থান নেয়নি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের চিঠিতে ট্রাম্পের এশিয়া সফরে রোহিঙ্গা সংকটসহ মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের জড়িত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

এশিয়া সফরে ট্রাম্প মিয়ানমার যাবেন না। কিন্তু চলমান এই মানবিক সংকটটি এই মুহূর্তে এশিয়ার প্রধান উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। এই সময়ে অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর এই সম্মেলনে যোগ দেবেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম শিকাগো ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তেমন কিছুই করেনি, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চীন ও রাশিয়ার বাধার মুখে ‘অথর্ব’ হয়ে আছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এই অবস্থায় সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত। আর তা করতে হলে ট্রাম্পকে উদ্যোগী হতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ প্রতিহত করা।

 

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন