আবারো সেই ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’
সন্তোষ বড়ুয়া:
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের উপর যেকোনো ধরণের অপরাধ হলেই তার দায়ভার বাঙালীদের উপর চাপিয়ে একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে উঠে পড়ে লাগে। তাদের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে উপজাতি-বাঙালী সম্প্রীতি ধ্বংস করা এবং বাঙালীদের দায়ী করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী বিতাড়ন আন্দোলন গড়ে তোলা। জাতিগত বিভেদ ভুলে সাধারণ বাঙালী এবং উপজাতিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের এরূপ নানান নোংরা রাজনীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালীদেরকে উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা।
এমনকি নিজেরাই কোন একটি অপরাধ সংঘটিত করে সেটাতে নানান রং চড়িয়ে বাঙালীদেরকে সরাসরি দোষারোপ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করে মিডিয়া এবং জনগণের নজর কাড়ার চেষ্টা করে আসছে। পাশাপাশি তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষতঃ ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালীদেরকে উৎখাত করার লক্ষ্যে নানান মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান করে আসছে।
এরকম ঘটনার মধ্য থেকে কিছু উদাহরণ সম্বলিত একটি লেখা এর আগে লিখেছিলাম। (বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন(http://goo.gl/rLNNCj)। এ সংক্রান্ত আরো জানতে ক্লিক করুন (http://goo.gl/t1x9b2)।
অতি সম্প্রতি (গত ২৮ জুলাই রাতে) খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার নয় মাইল নামক স্থানে এক ত্রিপুরা পল্লীতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা ত্রিপুরা ওরফে পুণাতি ত্রিপুরাকে। ওই ঘটনায় বাঙালি যুবকদের দায়ী করে মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। সেই প্রতিবাদের আওয়াজ পাহাড়ের গণ্ডি পেরিয়ে সমতলের মানুষের কাছেও পৌঁছে যায়। স্বাভাবিকভাবেই, সকল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই অবর্ণনীয় নৃশংসতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিল। আর, আমাদের দেশের মানুষের ঐতিহ্য এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সবাই এই ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
অন্যায়ের আর নৃশংসতার প্রতিবাদ করে, অপরাধীর শাস্তি দাবী করা হয়েছিল। যেহেতু এই ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে পাহাড়ীরা বাঙালিদের নাম উল্লেখ করে বিচার দাবী জানিয়েছিল। সেই দাবী অনুসারে পুলিশ চারজন বাঙালিকে গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য পায়নি এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে। এরপর পুলিশ অধিকতর তদন্তে নামে এবং কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্ত (৩২) নামক এক উপজাতি পুরুষকে আটক করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রবেন্দ্র ত্রিপুরা এই ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার লারমা স্কয়ার থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সে জেলার পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি ইউনিয়নের পুদ্যানীছড়া গ্রামের পূণ্যাধন ত্রিপুরার ছেলে এবং এমএন লারমা সমর্থিত জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। এছাড়া রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্ত খাগড়ছড়ি সদর থানার হত্যা মামলার পলাতক আসামী। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন (http://goo.gl/AMRp5f) এবং (http://goo.gl/5E7W1Y) এই লিংকে।
নারী নির্যাতন একটি সামাজিক অপরাধ। সারা বিশ্বেই এ অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও নারী নির্যাতনের মত ঘৃণ্য অপরাধ সংগঠিত হয়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি নারীরা খুন বা নির্যাতনের শিকার হলে এ বিষয়ে প্রতিবাদ, সভা, মানববন্ধন, সুশীল সমাজের প্রতিবাদ, মিডিয়ার অপপ্রচার, মানবাধিকার সংস্থাগুলির তোড়জোড় ইত্যাদির অন্ত থাকেনা। এ জন্য ধন্যবাদ জানাই তাদেরকে। কিন্তু উপজাতি নারী খুন বা ধর্ষিত হলে বাঙালিদের অনর্থক দায়ী করে সাম্প্রদায়িক বিবাদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানোর এই কুটকৌশল আর কতদিন চলবে?
এখানে বলাবাহুল্য, উপজাতি নারীরা উপজাতি পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিত হলে কোন সংগঠন তার প্রতিবাদ করে না। যেমন কৃত্তিকা ত্রিপুরা ওরফে পুণাতি ত্রিপুরা ধর্ষণ ও হত্যার পর যারা খুনির বিচার চেয়ে প্রতিবাদ, মিছিল, সমাবেশ, ফেসবুকে ভাইরালের জোয়ার উঠিয়েছিলো তারা এখন নীরব কেন তা আমার বোধগম্য নয়। খুনি ধর্ষক একজন উপজাতি পুরুষ- এইজন্যই কি সব খুন মাফ? এভাবে আর কত দিন চলবে? আরো দুঃখজনক বিষয় হলো এ ধরনের ঘটনাগুলো মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের পরিসংখ্যানে তালিকাভূক্ত করে না।
♦ লেখক- রাঙামাটি থেকে