পরিত্যক্ত ক্যাম্পে সেনা প্রত্যাবর্তনই কি সমাধান?

fec-image

বান্দরবানের চলমান পরিস্থিতিতে পরিত্যক্ত ক্যাম্পে সেনা প্রত্যাবর্তনই কোনো সমাধান নয়। আর সেনাবাহিনী কি বছরের পর বছর এসব ক্যাম্পে থাকবে? ক্যাম্প দিলেই তো হবে না। ম্যান্ডেট দিতে হবে। যুতসই অস্ত্র সরঞ্জাম দিতে হবে।

কী টাস্ক দেবেন তাকে? কোন আইন বলে সেনাবাহিনী কাজ করবে? লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কটি কী? সেনাবাহিনী কোন ক্ষমতাবলে অপারেশন করবে, তল্লাশি করবে, লোক গ্রেফতার করবে? ভারতে নাগা বিদ্রোহ দমনের জন্য আইন আছে ‌’AFSPA’- Armed Forces Special Power  Act 1958. কাশ্মীর বা অন্য এলাকার জন্য আছে TADA. নাগাল্যান্ডে ভারতীয় সেনাবাহিনী এই আইনী সুরক্ষার মধ্যে কাজ করে। কম্পিউটারের মাদারবোর্ড হার্ডডিস্ক মনিটর সব আছে যদি অপারেটিং সফটওয়্যার ইন্সটল না করেন তাহলে দামী কম্পিউটার রেখে কী হবে? সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে ইন এইড অফ সিভিল পাওয়ারে কাজ করে। পুলিশ, আনসার, বিজিবি সেনাবাহিনীর অধীনে নয়, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন সেনাবাহিনীর অধীনে নয়। সেনাবাহিনী সর্বাত্মক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না, যা ভারতীয় বাহিনী পারে AFSPA আর TADA ‘র মাধ্যমে।

আর চূড়ান্ত শান্তি রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর। না হলে হানাহানি থাকবেই।  পাহাড়ে-সমুদ্রে দস্যুতা কখনো চূড়ান্তভাবে দমন হয় না শক্তির মাধ্যমে। তবে রাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগ রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।  সেনাবাহিনীর ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায় নিতে হবে। শ্রীলংকায় বহু বছর ধরে চলা সংঘর্ষ ২০০৯ সালের অপারেশন ফাইনাল সলিউশনের মাধ্যমে সে দেশের সেনাবাহিনী দুর্ধর্ষ এলটিটিইকে পরাজিত করে নাই?  তো শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওয়ার ক্রাইমের অভিযোগ কোনো রাজনৈতিক সরকার পাত্তা দিয়েছে?

তবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা প্রয়োগে আলোচনার টেবিলে সমস্যার পথ খোঁজার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। তাছাড়া, সেনাবাহিনীর কাজের জন্য অর্থ ও সরঞ্জাম দরকার।  হাজার হাজার ক্যাম্প করে ঘর বাড়ি বানিয়ে শুধু ঘুমাবে, এটাই কি সেনাবাহিনীর কাজ? যারা ক্যাম্প করার জন্য যুক্তি দিচ্ছেন, তারা আসলে মিলিটারি অপারেশন সম্পর্কে জানেন না, বোঝেন না।  পুরো সীমান্তে শারীরিক প্রতিবন্ধক তৈরি করে সিল করে তার মধ্যে লাগাতার পেদানী দিলে মশা কমবে। কিন্তু স্হানীয় জনগণের জীবন-জীবিকা বলে কিছু থাকবে না। উদ্বাস্তু হবে, রিফিউজি হবে। নাগাল্যান্ডে আফসার কারণে হাজার হাজার গ্রাম থেকে নাগাদের সরিয়ে গুচ্ছ গ্রামে থাকতে বাধ্য করা হয়। এতকিছু করার পরও অর্ধেক নাগা এখনো ( NSCN- I M) অস্ত্র ছাড়েনি। তারা দুর্বল হয়েছে কিন্তু একেবারেই মরে যায়নি।

কিন্তু বান্দরবানে সেরকম করতে পারবে সেনাবাহিনী? হাজার হাজার বম, পাংখোয়া, লুসাই, মুরং, ম্রোকে গুচ্ছ গ্রামের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ধরে রাখতে হবে। তারপর অভিযান চালাতে হবে। কিন্তু বলা যত সহজ করা তত সহজ নয়। বান্দরবানের ভূমি আর খাগড়াছড়ির ভূমি এক রকম নয়। তাছাড়া, কুকি-চিনরা একা নয়। সীমান্তের ওপারেই আছে তাদের খালার বাড়ি। রসদের অভাব নেই।  আর এখন শুধু গ্রাউড অপারেশন করে অর্থাৎ এটাক হেলিকপ্টার ছাড়া সাফল্য আসবে না। এই সব অপারেশন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও রক্তক্ষয়ী। বাংলাদেশ কি পারবে সেটা বহন করতে? সামরিক সাফল্য চূড়ান্ত কোনো সমাধান নয়, তবে এর মাধ্যমেই রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা যায়। সে রাজনৈতিক সমাধানটি কী? আমরা কি আরেকটা সন্তুলারমা দেখতে চাই?
লেখক: পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সামরিক বিশ্লেষক

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন