বাংলা’র শক্তি সকল ভাষার মুক্তি

fec-image

মানুষের যোগাযোগের সহজ ও সুবোধ্য মাধ্যমই ভাষা। একজন মানুষ সেই ভাষা সম্পর্কে প্রথম ধারণা পেয়ে থাকেন কিংবা কন্ঠ মেলান মায়ের সাথে। ভাষাবিদদের মতে, ভাষার উৎপত্তি প্রায় ১ লাখ বছর আগে। বর্তমান পৃথিবীতে ৭,০৯৯ টি ভাষা প্রচলিত আছে। (তথ্য সূত্রঃ ইথনোলগ ২০তম সংস্করণ)। তার মধ্যে ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। এমনটি হলেও বাংলা ভাষার ইতিহাস সবার চেয়ে ভিন্ন। অন্যান্য ভাষার মর্যাদা রক্ষার অধিকার পেয়েছে বাংলা ভাষার মাধ্যমে।

পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ মাত্র ২৩টি ভাষাতেই কথা বলে। বিলুপ্তির পথে আছে পৃথিবীর ২৪ হাজার ভাষা।বিলুপ্তির পেছনে রয়েছে নানা রহস্য ও কারণ। ভাষী/ভাষকের স্থানান্তরের কারণে এবং ভাষার চর্চা/ গবেষণার অভাবে একটি ভাষার মৃত্যু ঘটতে পারে। ভাষা নিয়ে গবেষণা, লেখালেখি এবং প্রয়োগের মাধ্যমে একটি ভাষার পুনর্জন্ম হতে পারে। ভাষক স্থানান্তরের মাধ্যমে ভাষা সমৃদ্ধ বা ঋদ্ধ হওয়ার মতো ব্যতিক্রমী ঘটনা আছে।  যুদ্ধবিধ্বস্ত সিয়েরা লিওনে জাতিসংঘের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় কাজ করতে যাওয়া বাংলা ভাষী শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশ ২০০২ সালে বাংলাকে তাদের সরকারি ভাষা বা অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহন করে। জাতি হিসেবে এটি আমাদের গর্বের এবং অনন্য অর্জন। ইংরেজি পৃথিবীতে অন্যতম জনপ্রিয় ভাষা। কারণ হচ্ছে ইংরেজদের উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা। দীর্ঘ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ইংরেজদের উপনিবেশ ছিলো বা আছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়াসহ নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা বিভাগ রয়েছে এবং বেশ সমৃদ্ধ। চীনের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা নিয়ে স্মাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়াশোনা হচ্ছে। এছাড়া গবেষণাও হচ্ছে ব্যাপকভাবে। মূলত বাংলাদেশের মানব সম্পদ অনেক বেশি উন্নত। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো ভাষা যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলার মানব সম্পদ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশিদেরও বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন কর্মসংস্থানে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার সুযোগ হচ্ছে। এতে বাংলা ভাষার গৌরব বিশ্বময় সৌরভের কেন্দ্রবিন্দুতে আসছে। রাষ্ট্রীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে সমানতালে লাভবানের সম্ভাবনায় এগিয়ে যাচ্ছে।  বিদেশিরাও বাংলা ভাষা শিখছে ; এটাই আমাদের প্রাপ্তি। যখন জানতে পেরেছে পৃথিবীতে একমাত্র জাতি বাঙালি যারা ভাষার জন্য অবলীলায় বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বর্ণ, শব্দ, ভাষা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন; তখন বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ, কৌতুহল জন্মানো ব্যতিক্রম কিছু নয়। কারণ এ বাংলা ভাষার মাধ্যমেই সেই বিদেশি/বিদেশিনী তাঁর মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষার মর্যাদা পেয়েছে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে।

তবে বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা এবং সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানান প্রতিক্রিয়া। “নানান দেশের নানান ভাষা বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা”। রামনিধি গুপ্তের বিদেশি ভাষার প্রতি এমন অতৃপ্ত বহিঃপ্রকাশ হলেও বর্তমান সময়ে নিজে ছেলে-মেয়েদের মুখে ইংরেজি ভাষার ডাক শুনে স্মার্ট তৃপ্তির ঢেকুর নিতে চান অনেক বাঙালি অভিভাবক। “যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী—দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জোয়ায়, নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশে ন যায়!” এটি মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি আব্দুল হাকিমের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলেও বর্তমান যুগেও অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে। “শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা” দিবসের স্বীকৃতিতে শুধু যে ব্রাহ্মণ্য ভাষার সুরক্ষা হয়েছে তা নয়; ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীও তাদের মায়ের ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ মাতৃ ভাষায় কথা বলার রাষ্টীয় স্বাধীনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।

লেখক: তথ্য অফিসার, জেলা তথ্য অফিস, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন