তিন পার্বত্য জেলায় বাঙ্গালীরা নিজদেশে পরবাসী

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় বাঙ্গালীরা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত। এখানে বাঙ্গালীরা পদে পদেই বঞ্চিত৷ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের সঙ্গে বাংলাদেশের মূল সংবিধানকে পাশকাটিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। অনেকটা তড়িঘড়ি করে পাহাড় শান্ত করনের আওতায় ও যথাযথ বিশ্লেষক বা বিশেষজ্ঞ দ্বারা বিশ্লেষণ না করেই একতরফাভাবেই উপজাতি জনগোষ্ঠীকে অতিরঞ্জিত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)। কথিত আছে তৎকালীন চুক্তির সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো সম্পর্কে ভবিষ্যতে কি কি অসুবিধা হতে পারে এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করানো হয়নি। যার কারণে বাংলাদেশের মূল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক ধারা চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে। এই চুক্তিতে বৈষম্যমূলক এবং বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বিতর্কিত অনেকগুলো ধারা-উপধারা রয়েছে৷ সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো পার্বত্য বাঙ্গালীকে নিজদেশে পরবাসী করেছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, দেশের বাঙ্গালীদের তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি ক্রয় ও স্থায়ীভাবে বসবাস করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকদের জন্য সমান অধিকারের কথা বলা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকারকে মূল্যায়ন না করে করে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত করে একচেটিয়া উপজাতিদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এর ফলে এখানকার বাঙ্গালীরা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা-চাকরি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। মূলত এই কারণে সবকিছুতে উপজাতীয়দের অধিকারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় পার্বত্য চুক্তির কারণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এ কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও বারংবার চুক্তির সবগুলো ধারা বাস্তবায়ন করার বার বার তাকিদ দিচ্ছে।অন্যদিকে চুক্তির করার পেছনে দেয়া দুটি শর্ত -(১.সন্ত্রাসী ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ও ২.সকল অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ জমা ও ইস্তফা দিয়ে শান্তি আনয়ন করা) কোনোটিই তারা বাস্তবায়ন করেনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যেসকল সংবিধান বিরোধী ও বৈষম্যগুলো ধারা-উপধারা রাষ্ট্রের পার্বত্য নিয়ন্ত্রণ খর্ব করেছে এবং বাঙ্গালীদের অধিকার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে- তার উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১. তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালীরা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারবে না।
২. আঞ্চলিক পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হইতে পারবে না।
৩. তিন জেলায় সরকার ভূমি গ্রহন করতে হলে জেলা পরিষদের অনুমতি লাগবে।
৪.পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডে বাঙালীরা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেও এক্ষেত্রে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
৫. পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, উপজাতি বিষয়ক শরণার্থী ট্রান্সপোর্ট চেয়ারম্যান এবং পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের সচিব ও পাহাড়ি হিসেবে অগ্রাধিকার পাবে।
৬. বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোন লোক পাহাড়ে ভূমি খরিদ করিতে পারিবে না ।
৭. জেলা প্রশাসকের নাগরিকত্ব সনদপত্র ছাড়া ভূমি ক্রয়-বিক্রি করা যায় না।
৮. বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর জাতি-উপজাতি পরিচয় ঠিক করবেন হেডম্যান রিপোর্ট অনুযায়ী সার্কেল চীফ।
৯. তিন পার্বত্য জেলায় সরকারী ও আধা – সরকারী চাকুরীতে প্রতি ১০০ জন জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯০ জন উপজাতি কোটায় ও মাত্র ১০ জন বাঙালী নিয়োগ পেয়ে আসছে। যা নিয়োগের ক্ষেত্রে সমিচিন নয়। এটা বাঙ্গালীদের সঙ্গে বৈষম্যের সামিল।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামের পুলিশ জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা
১১. দেশের প্রচলিত ভূমি আইন অকার্যকর করা
১২. সরকারি চাকরি-শিক্ষায় একতরফাভাবে উপজাতিদের অগ্রাধিকার ও ৫ ভাগ কোটা দেওয়া।
১৩. পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
১৪. তিন জেলার কোনো শিল্প কারখানা করতে আঞ্চলিক পরিষদের অনুমতি লাগবেই। এখানে বাহির থেকে এসে কেউ শিল্প কারখানা করতে পারছে না। যার ফলে পাহাড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছেনা।
১৫. উপজাতিরা সমগ্র বাংলাদেশে বসবাস, চাকুরী , ব্যবসা ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহন করতে পারে পক্ষান্তরে তিন পার্বত্য জেলায় বাহিরের কোন নাগরিক এ এলাকায় তা করতে পারছে না।

উপরোক্ত সংবিধান বিরোধী ও বৈষম্য মূলক ধারাসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং অঞ্চলের লাগাম বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বিদেশী অপশক্তির কর্মকাণ্ড এবং ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এর প্রভাব নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের পার্বত্য কার্যক্রমের উপর বর্তাবে। এখানকার উপজাতি জনগোষ্ঠী সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকে অনেক এগিয়ে গেছে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উপজাতি স্বার্থান্বেষী মহল সবসময় মিথ্যা অভিযোগ, অসত্য অপপ্রচার দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি নিত্যনৈমিতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । যার ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সকল নিরাপত্তা বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্য হয়।

এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান তার নিজস্ব গাড়িতে রাষ্ট্রীয় পতাকা বহন করার পরেও রাষ্ট্রের প্রধান এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি স্বরূপ কথাবার্তা বলে থাকেন। যার ফলে বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের তথাকথিত বাম সুশীল সমাজের কিছু বুদ্ধিজীবী ও অধ্যাপক ও টাকার লোভে লালায়িত কতিপয় লোকজন। তাই এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ও দেশের ভিতরে বাঙালি সুশীল সমাজ ও আঞ্চলিক দলগুলোর দেশদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বতিমুর এবং দক্ষিণ সুদানের মত অবিকল খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন