টেকসই উন্নয়নে ওজোনস্তর রক্ষায় মন্ট্রিল প্রটোকলঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

fec-image

ওজোনস্তর (Ozone Layer) এর ক্ষয় এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় বিষয়ে জনসম্পৃক্ততার লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৬ সেপ্টেম্বর কে “বিশ্ব ওজোন দিবস” ঘোষণা করে; সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন হয়ে আসছে।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “Montreal Protocol: fixing the ozone layer and reducing climate change” অর্থাৎ “মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন করিঃ ওজোনস্তর রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করি”। ওজোন(O3) হচ্ছে অক্সিজেন(O) এর একটি বহুরূপ। মূলত এটির গঠন প্রক্রিয়া হচ্ছে অক্সিজেন অনুর সাথে অতিবেগুনী রশ্মির বিক্রিয়া। বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তর স্ট্রাটোমন্ডলের নিচের অংশে ওজোনস্তরের অবস্থান যা ভূ-পৃষ্ঠ হতে ২০-৩০ কি.মি. উর্ধ্বে। ফরাসী পদার্থবিদ চার্লস ফ্যব্রি এবং হেনরি বুইসন এটি আবিস্কার করেন। ওজোনের ঘনত্ব খুব কম হলেও সূর্য হতে বিচ্ছুরিত ক্ষতিকর অতিবেগুনী ( Ultraviolet, UV) তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রায় ৯৯% শোষণ করে নিতে পারে। UV রশ্মির প্রভাবে দুরারোগ্য ক্যান্সার, চোখের ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস, মানুষের গড়আয়ু হ্রাস,উভয়চর প্রানীর সংখ্যা কমে যাওয়া, উদ্ভিদের ক্লোরোসিস রোগ, উৎপাদনশীলতা হ্রাস,খাদ্যচক্রের ক্ষতিসাধন, জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত করে এবং ওজোনস্তর UV শোষনের মাধ্যমে উদ্ভাসিত জীবসমূহকে এমন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ওজোনস্তর ১০% ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এ রোগে প্রায় ৭০০০ জনের মৃত্যু ঘটে। তাই ওজোনস্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা Natural Sunscreen বলে।

ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ২০০ডবসন একক অপেক্ষা কমে গেলে তাকেই ওজোন গর্ত বা গহ্বর বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের মতে, ওজোনস্তরের ক্ষয় মূলত মনুষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আধুনিক বিশ্বে জীবনযাত্রাকে সহজ ও উন্নত করতে প্রথম ১৯৬০ সাল বাণিজ্যিকভাবে শীতলীকরণ কাজে রেফ্রিজারেটর, হিমাঘার, হেয়ার স্প্রে, এয়ারকন্ডিশন, ফোম শিল্প প্রভৃতিতে হ্যলোজেন যৌগ CFC( Chloro Floro Carbon) ব্যবহার করা হয়। উক্ত CFC গ্যাস বায়ুমন্ডল প্রবেশকৃত ১% অতিবেগুনী তেজস্ক্রিয় রশ্মি দ্বারা ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন করে,যা ওজোনকে ভেঙে অক্সিজেন(O2) এ রূপান্তরিত করে। হ্যালোজেন মৌল ক্লোরিন ৫০-১০০বছর পর্যন্ত বায়ুমন্ডলে অক্ষত অবস্থায় থাকতে পারে এবং ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে।

মনুষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন উৎস ছাড়াও প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন-অগ্নুৎপাত,বজ্রপাত, আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রভৃতি কারণেও ওজোনস্তর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওজোনস্তর ক্ষয়ের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের কাছে ১৯৭৮ সালে পরিচালিত চিলির পুনটা এরিনাস অভিযানে কুমেরুর আকাশে ধরা পড়ে। প্রতি দশকে স্ট্রাটোমন্ডলে ৪% ওজোনস্তরের ক্ষয় হতো বলে ধারণা করা হয়; এটিকে ওজোন ছিদ্র(Ozone Hole) বলে অভিহিত করেন।

মন্ট্রিল প্রটোকল বা চুক্তি হচ্ছে ওজোনস্তর রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি। বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোনস্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর কানাডার মন্ট্রিলে ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এই প্রটোকল বা চুক্তি গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সকল রাষ্ট্র মন্ট্রিল প্রটোকল এবং সংশোধনী সমূহে অনুস্বাক্ষর করে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮১টি রাষ্ট্র কিগালী সংশোধনী অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এতে ১৮ প্রকার এইচএফসি ( হাইড্রোফ্লোরোকার্বন) নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। এ প্রটোকল অনুযায়ী যে-সব ওজোন ডিপ্ল্যান্টিং সাবস্ট্যান্সগুলো ওজোনস্তর ক্ষয় করে, সেই গ্যাসগুলো আর কোন দেশ আমদানি-রপ্তানি বা ব্যবহার করতে পারবে না। এইচসিএফসি সমূহ গ্রীনহাউজ গ্যাস যার বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্ষমতা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় কয়েক’শ গুণ বেশি। তাই এইচসিএফসিসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী বলে ধরা হয়।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। ১৭ টি অভীষ্টের মধ্যে ১. দারিদ্র্য বিলোপ। যেটি ওজোনস্তর ক্ষয় তথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কর্মসংস্থান হারানো ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বাস্তবায়ন কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অতি দরিদ্রের হার ছিল ১২.৯ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে ৫.৬ শতাংশে হয়েছে। এক্ষেত্রে সফলতা আশাব্যঞ্জক।

২. ক্ষুধা মুক্তি। ওজোনস্তর ক্ষয়ে ক্লোরসিসসহ কৃষি ক্ষেত্রে অনেক বিরূপ পরিবেশেও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রণোদনা এবং পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে উন্নত জাতের উৎপাদনশীল বীজ আবিষ্কার ও সরবরাহের কারণে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা(এফএও) এর মতে প্রাথমিক কৃষিপণ্য(শুধু ফসল) উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪তম। এছাড়াও ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

৩. সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ। ওজোনস্তর ক্ষয়ের অন্যতম প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ক্যান্সার ও প্রজনন উর্বরতা হ্রাসের সত্বেও বাংলাদেশ সরকার অংশীজনদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ অবদান রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

৮. শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তেজষ্ক্রিয় অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে সমষ্টিগতভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব একচেটিয়া। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে ৬.০৩% এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৭.৫% পৌঁছাবে বলে ধরা হয়েছে।

১৩.জলবায়ু কার্যক্রম। ওজোনস্তর ক্ষয়ে তেজস্ক্রিয় অতিবেগুনী রশ্মির দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলবায়ু। উষ্ণায়ন উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলাদেশ নদীমাতৃক এবং সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় প্রকৃতির দুর্যোগগুলোর সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মন্ট্রিল প্রটোকল অত্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ এবং ২০১৭ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ দপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়া ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন, জাতিসংঘ পরিবেশ এবং ওজোন সেক্রেটারিয়েট ২০১৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর- কে পুরস্কৃত করে।

১৪. তে জলজ জীবন এবং ১৫.তে স্থলজ জীবন তথা বাস্তুসংস্থানের জন্য এটি বড় ধরনের হুমকি বলে উল্লেখ করেন গবেষকেরা। জীববৈচিত্র্যের তারতম্যের কারণে অনেক প্রাণী এবং সমুদ্র তলদেশে থাকা ফাইটোপ্লাংকটনসহ জীবসমূহের বিলুপ্তি তার প্রমাণ। ওজোনস্তর ক্ষয় ঠেকাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব উজ্জীবনকরণ ও বাস্তবায়নের উপায়সমূহ শক্তিশালী করার জন্য “সকলের সাথে বন্ধুত্ব,কারো সাথে বৈরিতা নয়” নীতিতে সরকারি, বেসরকারি -বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে ১৭ নাম্বারে থাকা অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব বাস্তবায়নে অভিন্ন নীতির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ।

২০০২ সালে এ্যারোসল সেক্টরে ” Conversion to CFC free technology for the production of aerosol products at ACI Ltd.” প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ মন্ট্রিল প্রটোকলের কমপ্লায়েন্ট দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে প্রায় ৫০% ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। ২০০১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত রেফ্রিজারেন্ট প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৩৮০ ওডিপি টন ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস করা হয়। ঔষধ শিল্পে দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০১২ সালের মধ্যে সিএফসি ব্যবহার শতভাগ হ্রাস করা সম্ভব হয়। এইচসিএফসি এবং এইচএফসি এর পরিবর্তে হাইড্রোকার্বন যেমন R-600a,R-290 হিমায়ক ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব এবং ওজোনস্তর ক্ষয় করে না। পরিবেশ অধিদপ্তর ওজোন সেলের মাধ্যমে সরকার জাতীয় কুলিং প্ল্যান বাস্তবায়ন করে।

মন্ট্রিল প্রটোকল সমন্বয়ের মাধ্যমে এইচসিএফসি ফেজ আউট করার নির্ধারিত সময় ২০৪০ থেকে পুননির্ধারণের মাধ্যমে তা ২০৩০ সালকে সময়সীমা ধরা হয়।সে লক্ষ্যে সরকার ক্ষতিকর দ্রব্য আমদানি -রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে “ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৪”; সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে সংশোধন করে। ১ জানুয়ারি ২০১০ হতে সিএফসি,কার্বটেট্রাক্লোরাইড ও মিথাইলক্লোরোফরম ফেজ আউট শুরু করা হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশে সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর এইচএফসি ফেজ আউট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান(এইচপিএমপি) স্টেজ-১ প্রণয়ন করে যা মাল্টিলেটারেল ফান্ডের ৬৫তম নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন লাভ করে। ২০১২ সাল হতে ঔষধ শিল্প হতে সিএফসি এবং রেফ্রিজারেটর ফোম তৈরিতে এজেন্ট হিসেবে এইচসিএফসি-১৪১বি এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। ২০১৮ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল ফান্ডের ৮১তম নির্বাহী কমিটির সভায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৬৭.৫% কমিয়ে আনার টার্গেট রেখে এইচসিএফসি ফেজ আউট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান( এইচপিএমপি) স্টেজ-২ অনুমোদিত হয়, যার মাধ্যমে ১.৭ মিলিয়ন টন কার্বনডাইঅক্সাইড সমতুল্য গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ এড়াবে বলে আশা করা হয়। এ্যানাব্লিং এ্যাকটিভিটিজ অব বাংলাদেশ ফর এইচএফসি ফেজ- ডাউন(ইউএনইপি-কম্পোনেন্ট) প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত দ্রব্য সনাক্তকরণসহ মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়নে কাজ করে।

২০১৪ সালে ওডিএস(Ozone Deplanting Substance) তথা এইচসিএফসি ব্যবহার বন্ধ করতে US State Department এর আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির একটি লাইনে এইচএফসি ১৩৪-এ এর পরিবর্তে হাইড্রোকার্বন R-600a ব্যবহার প্রকল্প নেওয়ায় পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়াটন কর্তৃক উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করে যা বাংলাদেশের “ব্র্যান্ডিং” হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব কোম্পানি এসব পণ্য আমদানি করতো তারা এখন বিকল্প হিসেবে কি ব্যবহার করছে তা কঠোর পর্যবেক্ষণ ও নজরদারির মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনলে সরকারি -বেসরকারি উদ্যোগ, অর্থায়ন, চুক্তি আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন। স্বস্তি ও আনন্দের বিষয় হচ্ছে, মন্ট্রিল প্রটোকলের আওতায় পৃথিবীব্যাপী ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ৯৯% ব্যবহার প্রায় বন্ধ করা গেছে এবং অবশিষ্ট ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ওজোনস্তরের ক্ষতও সেরে উঠতেছে। তবে তা খুব ধীর গতিতে।

মার্কিন প্রফেসর সুজান সোলেমান, তাঁর সহকর্মীরা এবং যুক্তরাজ্যের লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী কুমেরু বা এন্টার্কটিকার ওপরে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে ২০০০ সালে যে ওজোন গর্তটির আয়তন ভারতের আয়তনের সমান ছিলো; সেটি ২০১৫ সালে ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার ছোট হয়ে গেছে। মন্ট্রিল প্রটোকলের আওতায় হ্যলোজেন মৌল যেমন-ক্লোরিন, ব্রোমিন যৌগের ব্যবহার হ্রাসকেই এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে ২০৫০-৬০ সালের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সরকার এ যাবৎ ওজোনস্তর রক্ষায় ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওজোন সেল এ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন, ওডিএস চোরাচালান বন্ধে মনিটরিং, প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যমান কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালী করার জোর দাবী জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। সরকার জাতীয় জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) বাস্তবায়নে কাজ করছে।

বিশ্বব্যাপী ওজোনস্তর ক্ষয় রোধে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কিগালী সংশোধনে এইচএফসি এর বিকল্প রাসায়নিক বা প্রযুক্তির কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত টেকসই ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো মন্ট্রিয়ল প্রটোকল বাস্তবায়নে মাল্টিলেটারাল ফান্ডের উপর নির্ভরশীল ; তাই ওজোনস্তরকে পূর্বাবস্থায় ফিরে পেতে এ ফান্ডকে বিস্তৃত এবং সমুন্নত করার বিকল্প নেই। (তথ্য সূত্রঃ ওজোন সেল,পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়)

লেখক ও কলামিস্ট: সরকারি কর্মকর্তা (সহকারী তথ্য অফিসার, রামগড়,খাগড়াছড়ি)

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন