আলীকদমে রোহিঙ্গার মামলায় ২ মাদরাসা শিক্ষক গ্রেফতার

fec-image

আলীকদম প্রতিনিধি:

মাদ্রাসার রিংওয়েল থেকে পানি নিতে নিষেধ করায় পরিকল্পিত ঘটনা সৃষ্টি করে মাদরাসা পরিচালকসহ ৫ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ছলেমা খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা।

এ ঘটনায় মাদরাসার ২ শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত না থাকায় অপর এক শিক্ষকসহ মাদরাসা পরিচালকের স্ত্রী ইসমত আরাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন ধার্য থাকলেও এমন ঘটনার পর স্থগিত করা হয়েছে মাদরাসার বার্ষিক ধর্মীয় সভা।

জানা গেছে, আহমদ শরীফ নামে এক ব্যক্তি স্বপরিবারে ১০ বছর আগে মায়ানমার থেকে আলীকদম এসে বাস স্টেশনস্থ ঠান্ডা মিস্ত্রি পাড়ায় বসবাস শুরু করে। বিগত প্রায় ৮ বছর আগে মকবুল হাফেজ থেকে জমি কিনে ১নং আলীকদম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দানু সর্দার পাড়ায় বসত বাড়ি নির্মাণ করে।

এরপর এই রোহিঙ্গা নাগরিক আহমদ শরীফ ৫/৬ বছর পূর্বে মালয়েশিয়া চলে যায়। তার স্ত্রী ছলেমা খাতুন ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করছে। এরমধ্যে আহমদ শরীফের ছেলে মো. আলম একাধিকবার ভারতে আসা যাওয়া করতে থাকে।

সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে প্রত্যক্ষদর্শী বাবুর্চি আম্বিয়া খাতুন জানান, আলীকদম ফয়জুল উলুম মাদরাসার বার্ষিক সভা উপলক্ষ্যে মাদরাসার রিংওয়েল থেকে আশেপাশের প্রতিবেশীকে ২৩-২৪ এপ্রিল পানি না নিতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু অনুরোধ অমান্য করে রোহিঙ্গা মো. আলম মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে মাদরাসা কক্ষে ঢুকে পানির মোটরের সুইচ টিপে পানি উত্তোলন করতে গেলে ছাত্ররা বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষে হাতাহাতি হয়। এসময় মাদরাসা পরিচালক শামশুল হুদা সিদ্দিকীসহ অন্য শিক্ষকরাও আলমকে বাধা দেয়। এরপর আলম তার মা ছলেমা খাতুন ও তার বোনকে মাদরাসায় ঢেকে আনে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, আলমকে পানি নিতে বাধা দেওয়ার পর আলমের মা ছলেমা খাতুন ও তার বোন মাদরাসায় এসে পরিচালক মাওলানা শামশুল হুদা সিদ্দিকীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার গাঁয়ের কাপড় ধরে টানাটানি এবং জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে।

এসময় অন্যান্য শিক্ষকরা তাদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে মাদরাসা পরিচালক শামশুল হুদা রোহিঙ্গা মহিলাটিকে চড়-থাপ্পর মেরে ঘটনাস্থল থেকে তাড়িয়ে দেন। এ ঘটনা অদূরে দাঁড়িয়ে ভিডিও ধারণ করে ছলেমার বড় ছেলে মো. আলম ও তার ভাই রফিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এ ঘটনা পুলিশ জানতে পেরে দুপুর ১২টার দিকে উভয় পক্ষকে থানায় নিয়ে আসে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) মাদরাসার বার্ষিক সভা থাকায় পুলিশ উভয় পক্ষকে সমঝোতা করে দেয়। কিন্তু একটি অনলাইন পত্রিকার ফেসবুক পেইজে এ ঘটনার মারামারি সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশিত হলে পুলিশ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টায় মাদরাসায় অভিযান পরিচালনা করে।

এসময় মাদরাসা কক্ষ থেকে শিক্ষক হাফেজ আলমগীর, মাহমুদুল করিম ও মুফতি শফিউল আলম এবং মাদরাসা পরিচালক শামশুল হুদা সিদ্দিকীর স্ত্রী ইসমত আরাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।

জানতে চাইলে অফিসার ইনচার্জ রফিক উল্লাহ্ বলেন, ফেসবুকে মারামারির ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর ছলেমা খাতুন বাদি হয়ে মাদরাসা পরিচালকসহ ৪ শিক্ষকের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। এঘটনায় থানায় মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্ত ২ শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মাদরাসা শিক্ষক মো. তৌহিদ জানান, মো. আলম গভীর রাত পর্যন্ত মাদরাসার ছাদে উঠে নেশাদ্রব্য সেবন ও মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। এ নিয়ে মাদরাসা শিক্ষকরা পূর্ব থেকে মো. আলমকে বাধা প্রদান করে আসছিল। কিন্তু আলম বাধা অমান্য করে রাত মাদরাসায় যাতায়াত করতো। এ নিয়ে পূর্ব হতে মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রদের সাথে আলমের বিরোধ চলে আসছিল।

এদিকে, পূর্ব নির্ধারিত বার্ষিক ধর্মীয় সভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভা বন্ধ হওয়ায় হতাশ হয়েছেন মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীসহ স্থানীয়রা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে মাদরাসা আঙ্গিণায় পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মাদরাসায় পার্বত্য আলীকদমে দ্বীনি শিক্ষা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ পর্যন্ত কয়েক শতাধিক হাফেজ মাদরাসা সংযুক্ত হাফেজখানা থেকে পাগড়ি পেয়েছে। এবারের বার্ষিক সভায়ও ৫ জন কোরআনে হাফেজকে পাগড়ি প্রদান করার সিদ্ধান্ত ছিল।

সরেজমিন অনুসন্ধানকালে স্থানীয়রা জানায়, এ পরিবারটি রোহিঙ্গা বলে আমরা জানি। তাদের সাথে প্রতিবেশীদের ভালো সম্পর্ক নেই।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবু সালাম জানান, মামলার বাদি ছলেমা খাতুন স্বপরিবারে রোহিঙ্গা। তার ছেলে আলম প্রায় সময় ভারতে যাওয়া আসা করে। কিন্তু কী কারণে তার ভারত যাতায়াত আমি জানি না।

ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুবিন বলেন, পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। ছলেমা খাতুনের পরিবার রোহিঙ্গা। এরা উচ্ছৃঙ্খল পরিবার হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ পরিবারের লোকেরা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করলেও আসলে তারা রোহিঙ্গা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে আলমের ভাই রফিক জানান, আমার বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী। আমার ভাই আলম ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করতেন। ইদানিং সে আর ভারত যাচ্ছে না। ড্রাইভিং শিখছে।

তার মাকে যখন মারধর করা হচ্ছিল তখন মাকে রক্ষা না করে তারা দুই ভাই কেন ভিডিও ধারণ করছিল এ প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, আমরা ওদের সাথে পারবো না। তাই কৌশল অবলম্বন করেছি।

উল্লেখ্য, স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও তথ্য সংগ্রহকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের সহযোগিতায় আলীকদমে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদমে রোহিঙ্গার মামলায় ২ মাদরাসা শিক্ষক গ্রেফতার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন