কক্সবাজারে ছড়া-খালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থাপনা

fec-image

কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের জেলগেইট এলাকায় শতবর্ষী একটি ছড়া দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতবর্ষী ছড়ার অধিকাংশ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কর্মকাণ্ড চলমান থাকায় পানি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বৃষ্টির সময় পুরো এলাকা পানি বন্ধি হয়ে পড়ছে।

সরেজমিন কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের জেলগেইট পালস স্কুলের পেছনে রহমতপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত ছড়ার অধিকাংশ পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করে তাতে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ছড়ার পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন।

এলাকাবাসী জানান, কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট বেশ কিছু দিন ধরে শতবর্ষী একটি ছড়া ভরাট করে তাতে স্থাপনা নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি শুরু হলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পুরো এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সোলতান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুস সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে পিআইও ফরহাদ হোসেনকে নোটিশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান এলাকাবাসী।

রহমতপুর এলাকার সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কিছু লোক এখানে জমি কিনেছেন। তারা স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে শতবর্ষী প্রাকৃতিক ছড়াটি অধিকাংশ ভরাট হয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এতে বৃষ্টির সময় পুরো এলাকা পানি বন্ধি হয়ে পড়ে এবং প্লাবিত হয়।’

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ছড়াটি কয়েক দফা পরিদর্শন করে ছড়া ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের চিত্র দেখা যায়। ছড়াটি দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। একই সাথে সরকারি ১০ কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’ ছড়া ভরাটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সোলতান বলেন, ‘সরেজমিনে ছড়ার কিছু অংশে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। জনস্বার্থে ছড়ার বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক চলমান ছড়ায় অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘জমি কিনে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হয়। জমিটি বিক্রি করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’ এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী সিরাজুল ইসলাম জমি কিনে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথা স্বীকার করে প্রতিবেদককে তার অফিসে দেখা করতে বলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, ছড়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন