কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো বর্জ্য: অপসারণ বিলম্বে ভোগান্তি
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভেসে এসেছে নানা ধরণের বর্জ্য। এসব বর্জ্যের কারণে পাল্টে গেছে চিরচেনা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে বেড়াতে আসা পর্যটক ও পর্যটন সেবী সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের কবিতাচত্তর পয়েন্ট থেকে কলাতলীর শেষ পর্যন্ত অন্তত ৫টি পয়েন্টে শুধু বর্জ্য আর বর্জ্য। সকালে জোয়ারের সাথে ভেসে আসা এসব বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় গাছের টুকরো, বাঁশের শেকড়, পোড়া কাঠ, খড় ইত্যাদি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ধারণা করছে অন্তত ১০ থেকে ১২ টনের অধিক বর্জ্য ভেসে এসেছে।
দেখা যায়, এসব বর্জ্যের মধ্যে থাকা গাছ-বাঁশগুলো যে যার মত করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই হল সমুদ্র পাড়ের ক্ষুদ্র কিটকট ব্যবসায়ী নারী-পুরুষ। এছাড়া অনেক নারী পরিচ্ছন্নকর্মী বর্জ্য অপসারণ করছিলেন। তবে বর্জের বড় অংশ সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে থাকলেও বীচ ম্যানেজমেন্ট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অপসারণের তেমন উদ্যোগ ছিলনা।
বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে জানান, দেশের কঠিন পরিস্থিতি শেষে একটু স্বস্তির জন্য বেড়াতে এসেও শান্তি নেই। সমুদ্র সৈকতের এমন দৃশ্য তারা আগে দেখেনি। এ যেন আবর্জনার উপর দাঁড়িয়ে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করছে। গোসল করাতো দুরের কথা ভরপুর আর্বজনায় হেটে ভ্রমণ করাও কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমুদ্র সৈকতের ফটোগ্রাফার সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে জোয়ারের সাথে ভসে আসা বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে সৈকতের সৌন্দর্য। এই নোংরা পরিবেশের কারণে পর্যটকরা ছবি তুলতে চাইছেননা। ফলে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ।
সমুদ্র সৈকতে ভাড়াই চালিত বীচ বাইকার জালাল উদ্দিন বলেন, দেশের অস্থির পরিস্থিতির কারণে এমনিতে’ই ব্যবসা হচ্ছেনা। যখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে পর্যটক আসা শুরু করেছে তখনই সাগর থেকে আবর্জনা এসে ভরে গেছে। এই অবস্থায় বীচ বাইকে চড়তে চাইছেননা পর্যটকরা। সকালের দিকে এসব আবর্জনা ভেসে আসলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তা অপসারণ করা হয়নি।
বেড়াতে আসা পর্যটকের মধ্যে বাপ্পা চৌধুরী নামে এক যুবক জানান, দেশের অস্থির পরিস্থিতি শেষে একটু সস্তির জন্য কক্সবাজারে ঘুরতে এসেও মন খারাপ হয়ে গেল। এখানে এসে মনে হল আবর্জনা পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছি। প্রাকৃতিক নানা কারণে এমনটা হতেই পারে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব দ্রæত সময়ের মধ্যে এসব অপসারণ করা।
সুমাইয়া আক্তার নামে আরেক নারী পর্যটক জানান, আমরা আসছি গত ২ দিন আগে। গতকালও সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছিল। আজ পরিবার নিয়ে গোসল করতে এসে মন খারাপ হয়ে গেছে। সবাই চেয়ারে বসে সকালে আবর্জনা ভেসে আসার দৃশ্য দেখছি। বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম যাতে অন্তত কোন একটি পয়েন্টের আবর্জনা যদি সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে গোসলের ইচ্ছেটা পূর্ণ হত। এখন হয়ত সমুদ্র স্নান ছাড়াই ফিরতে হবে ঢাকায়।
বর্জ্যেও বড় অংশ সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে থাকলেও বিচ ম্যানেজমেন্ট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এদিকে আর্বজনা অপসারণের প্রসঙ্গে জানতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্বরতদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া না পাওয়ায় কথা বলা যায়নি।
এই প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মনজুর মোর্শেদ জানান, সমুদ্র থেকে বর্জ্য ভেসে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেখানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ করা হবে।