কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত, নির্ঘুম ১২ হাজার মানুষ

fec-image

মিয়ানমারের ওপার থেকে আবারো থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।

শুক্রবার (১ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে শনিবার (২ মার্চ) সকাল সাতটা পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, পৌরশহর ও সাবরাং এলাকায় এ বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে।

এতে আতঙ্কে হয়ে নির্ঘুম রাত কাটান এসব এলাকার অন্তত ১২ হাজার মানুষ।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, তিন দিন গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে নতুন করে শুরু হয় গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ। তবে গত দুই রাতে (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) লড়াইয়ের তীব্রতা আগের তুলনায় বেশি অনুভূত হয়েছে। বিমান হামলা বাড়ানোর পাশাপাশি আকাশ থেকে ছোড়া মর্টার শেলের বিকট শব্দও ঘনঘন কানে বাজছে।

টেকনাফের নেটং পাহাড়ে দাঁড়ালে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্য স্পষ্ট দেখা যায়। উত্তর-দক্ষিণে শত কিলোমিটার লম্বা রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর অবস্থান মধ্যভাগে। মংডুর পশ্চিমে নাফ নদী, পেছনে আকাশছোঁয়া কালাদান পাহাড়। দুই দিন ধরে মংডু শহরের উত্তর দিকের কুমিরখালী, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, বলিবাজার, কেয়ারিপ্রাং ও পেরাংপ্রু গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। বলিবাজার ও কুমিরখালী গ্রামে একাধিক সীমান্তচৌকি দখল এবং পুনরুদ্ধার নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, এক মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চললেও গত দুই দিন তার তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে মনে হচ্ছে। তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরিত মর্টারশেলের বিকট শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। সীমান্ত এলাকার হাজারো মানুষ খেতখামারে যেতে পারছেন না। অনেক এলাকায় চিংড়ি-কাঁকড়া, সবজি ও ধান চাষ বন্ধ আছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

দিনের চেয়ে রাতে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ বেশি ঘটছে জানিয়ে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মংডুর আশপাশের গ্রামগুলোয় ২০ থেকে ২৫টি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আগের দিন বৃহস্পতিবারও ১০ থেকে ১৫টি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজন শুনতে পান। মংডু শহরের উত্তরে বলিবাজার, পেরাপ্রুসহ কয়েকটি এলাকাতে সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধারের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। তাতে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম হচ্ছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ জালাল বলেন, মর্টার শেলের বিকট শব্দে তাঁর এলাকায় কম্পন অনুভূত হচ্ছে। রাতের বেলায় ঘনঘন কম্পনে শিশুদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, অনেকে ভয়ে কান্নাকাটি করছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে নাফ নদীর বুকে জেগে ওঠা তোতারদিয়া দুই সপ্তাহ আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এখন মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইনে নতুন করে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে বিজিবি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, মিয়ানমার, সীমান্ত উত্তেজনা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন