উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

টেকনাফে সাবেক এমপি বদি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

fec-image

আসন্ন কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলমের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

একে অপরের বিরুদ্ধে অপহরণ, গুলি ও গুজব রটানোর তকমা দিয়ে কথার ফুলঝুড়ি ছড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে গত শুক্রবার একে অপরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। তাদের এ কর্মকাণ্ড ‘টক অব দ্য টেকনাফ’ এ পরিণত হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে তুমুল আলোচনা ও বাক বিতণ্ডা চলছে।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রার্থী নুরুল আলম বলেন, ‘আমার সমর্থিত নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি এবং অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফর আহমদ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া এলাকায় আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। সংসদ সদস্য স্টিকার লাগানো গাড়ি যোগে সাবেক এমপি বদি ও অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফর আলম ঘটনাস্থলে এসে পর পর দুই রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। কিন্তু কৌশলগত কারণে তা আমার গায়ে আঘাত করেনি। সাথে সাথে আমি জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে আমি নিরাপদে ফিরে আসি। এ ব্যাপারে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফরের পক্ষে হয়ে সাবেক এমপি সংসদ সদস্য স্টিকার লাগানো গাড়ি যোগে প্রাচরণা করে যাচ্ছে। যা তিনি ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা তিনি এমপি নন, গাড়িতে সংসদ সদস্য স্টিকার লাগানো আইনগত অপরাধ এবং আচরণ বিধি লঙ্ঘন। আমি এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বিষয়টি নির্বাচন কমিশন বরাবরে লিখিতভাবে অবহিত করবো।’

এসময় তিনি সাবেক এমপি বদি এবং তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন মানুষজন, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, ঠিকাদার সহ নানা মানুষকে মারধর করার ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত সমালোচিত হয়েছে। এখন তিনি এমপি বদি এবং জাফর আহমদ মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপতৎতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার পক্ষে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সহ সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ। এখন নানাভাবে আমার কর্মীদের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। অথচ তিনি ভালোই জানেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের পরীক্ষিত এবং রাজপথের সংগ্রামের সৈনিকদের হুমকি দিয়ে রুখে দেয়াা যাবে না।

অপরদিকে সাবেক এমপি বদি বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফর আহমদসহ গত বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যায় বাহারছড়ার শিলখালীতে নির্বাচনী প্রচারণাকালে জানতে পারি হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি অপহরণের শিকার হয়েছে এবং তাকে পাহাড়ে নিয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে খুঁজতে তার এলাকা কম্বনিয়া চলে আসি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি একটি বিবাহ অনুষ্ঠান এবং সেখানে আতশবাজি চলছে। এসময় সেখানে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আলম ১০-২০ জন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাদের সমর্থক অপহৃত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হাসান রবিও রয়েছে। এসময় রবি থেকে জিজ্ঞেস করি ‘তোমার কি হয়েছে’ তখন সে বলে, ওরা তাকে ধরে নিয়ে এসেছে’। তাহলে তুমি চলে আসো বলে তাকে নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিই।
এরপর আলম চেয়ারম্যান বলেছে বলে শুনতে পাই, যদি নির্বাচনে একজন প্রার্থীর গায়ে আচড় লাগে নির্বাচন এমনেই বন্ধ হয়ে যাবে। আমি নাকি আলম চেয়ারম্যানকে গুলি করেছি? ’

সাবেক এমপি বদি আরো বলেন, ‘যেখানে গুলি করার মত কোন ঘটনায় ঘটেনি। বাস্তব হল আমি তাকে গুলি করিনি। কোন কারণে আমি আলম চেয়ারম্যানকে গুলি করবো? ’

তিনি আরো বলেন, ‘এই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে টেকনাফের সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমার ভোট আমি দেব যাকে ইচ্ছা তাকে দেব। প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য অঙ্গীকার বদ্ধ। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও অঙ্গীকার বদ্ধ। নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করার কোন সুযোগ নেই। ভোট কেটে নেওয়ারও কোন সুযোগ নেই। ইভিএম এর মাধ্যমে টেকনাফের ভোট হবে। তিনি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গুজব ছড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে বলেও তুলে ধরেন।’

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও শাপলা চত্বর নিজ নিজ কার্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমপি বদি ও নুরুল আলম চেয়ারম্যান শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, কক্সবাজার, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন