‘ক্ষমতার স্পর্শ বোধহয় ইলিয়াছকে সেই অতীত ভুলিয়ে দিয়েছে’

fec-image

কক্সবাজার-০১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মোহাং ইলিয়াছের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের অন্ত নেই। দুইজনের স্নায়ুযুদ্ধ অব্যাহত আছে। পক্ষে-বিপক্ষে বেশকিছু পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

দুইদিন আগে নিজের চিংড়িঘেরে লুট ও কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগ তোলে চকরিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ইলিয়াছ। সেখানে এমপি জাফরকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ স্থানীয় এই দুই নেতার দীর্ঘদিনের স্নায়ুবিক দূরত্ব এখন প্রকাশ্যে। ক্রমান্বয়ে ‘বাকযুদ্ধে’ রূপ নিচ্ছে।
দুই নেতার সমর্থকদের কেউ প্রতিবাদ করছে, আবার কেউ নিশ্চুপ হয়ে তামাশা দেখছে। সুযোগ সন্ধানী অনেকে দুই জনের বিপক্ষে ঘি ঢালছে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে এসব নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন জাফর আলম এমপি।

পার্বত্যনিউজের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা হুবহু উপস্থাপন করা হলো-

সাবেক সাংসদ স্নেহের ইলিয়াছ সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই। সারাজীবন তাকে ছোট ভাই হিসেবেই স্নেহ করেছি। আজ প্রাসঙ্গিক ভাবেই তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে বসেছি।

স্মৃতির পাতায় সালটা অস্পষ্ট। তখন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এমএ কামাল সাহেব। তাঁর সহধর্মিণী আমাকে সহোদর ভাইয়ের মতো জানতেন। ডিসি সাহেবও আমাকে খুবই স্নেহ করতেন।

ইলিয়াছের শ্বশুর শ্রদ্ধেয় মরহুম ইদ্রিস সাহেব হোটেল কল্লোলের জন্য জমি লিজ নিতে তখন খুব চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বিষয়টি আমার সাথে শেয়ার করলে আমি ডিসি সাহেবকে ইদ্রিস সাহেবের পক্ষে সুপারিশ করি।

ডিসি সাহেব লিজ দেয়ার জন্য সম্মত হলেন। একই সাথে ইদ্রিস সাহেবকে বললেন যে কল্লোলের জমি থেকে আমাকে যেন অর্ধেক অংশ দেওয়া হয়। তখন আমি বিনয়ের সাথে তাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করি। বালুকাময় সৈকতের জমির মূল্য সেদিন আমাকে বিমোহিত করতে পারেনি। আমি সম্পর্কটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি।

ফাইনালি ইদ্রিস সাহেবের নামেই জমি ইজারা প্রদান করা হয়। তখন থেকে ইদ্রিস সাহেব আমাকে আরো বেশী স্নেহ করতেন। যেকোন বিষয়ে আমার সাথে পরামর্শ করতেন। একদিন তিনি ছোট বোন আরজুর (ইলিয়াছের সহধর্মিণী) বিয়ে নিয়ে আমার মতামত জানতে চাইলেন।

পাত্র হিসেবে আমি ইলিয়াছের নাম প্রস্তাব করি। ইলিয়াস বেকার বলে তিনি আমার প্রস্তাবে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন। আমি ইলিয়াছের দায়িত্ব নিয়ে বললাম, ‘সে আমার ছোট ভাই। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দেখবো।’ একপর্যায়ে তিনি রাজি হলেন। আরজুর সাথে ইলিয়াছের বিয়ে হলো।

বিয়ের পর ইলিয়াছ চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় সময় ‘হানড্রেড’ খেলে বেকার সময় অতিবাহিত করতো। একদিন বড় ভাই হিসেবে তাকে ‘হানড্রেড’ খেলতে নিরুৎসাহিত করে সময়কে কাজে লাগানোর পরামর্শ প্রদান করি।

তখন তিনি আমাকে করুণ কন্ঠে বলল, ‘আমি কি করবো,ভাই? আমার তো করার কিছুই নেই।’ তার কথাগুলো আমার মনে সেদিন ভীষণ রেখাপাত করেছিল। আমি আবেগতাড়িত হয়ে তাকে আমার প্রজেক্টের পাশেই একটি বিশ একর প্রজেক্ট সম্পূর্ণ আমার প্রচেষ্টা ও খরচে নিয়ে দিয়েছিলাম। এভাবেই তার ব্যবসায়িক পথচলা শুরু..।

আমার স্নেহের ছোট ভাইয়ের কখনো মেম্বার নির্বাচন করারও অভিজ্ঞতা ছিল না। জীবনে সে কেবলমাত্র চিরিঙ্গা সমিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই নির্বাচনেও আমি তার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করি। সে নির্বাচিত হয়।এই হলো তার সাথে আমার সম্পর্কের ধারাবাহিকতা।

সমিতির নির্বাচনে জয়ী হতে কষ্ট হওয়া আমার সেই ছোট ভাই ইলিয়াছ ভাগ্যের বদন্যতায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের সেই জাতীয় নির্বাচনে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পথে থেকেও জোটগত কারণে দলীয় নির্দেশনায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে ইলিয়াছ জাতীয় পার্টির ব্যানারে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

ক্ষমতার স্পর্শ বোধহয় ইলিয়াছকে সেই অতীত ভুলিয়ে দিয়েছে। আমার ছোট ভাইটি এখন আমার দলের গুটিকয়েক অপরিনামদর্শী নেতার সাথে আঁতাত করে আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে অব্যাহত ভাবে মিথ্যাচার করছে। এসব দেখে মনে পড়ে গেল মুনীর চৌধুরীর সেই বিখ্যাত উক্তিটি-

“মানুষ মরে গেলে পচে যায়,
বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন