পাহাড়ে বন কর্মকর্তাকে হত্যা: ৯ দিন পর প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার রদ করতে গিয়ে পাহাড় খেকোদের ড্রাম্প ট্রাক চাপায় বনবিট কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উখিয়ার থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে থাকা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হত্যার প্রধান আসামি বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার (৮ এপ্রিল) ভোররাতে এ অভিযান চালানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল।

তিনি বলেন, আমরা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাকে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যসহযোগীদের বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, রোববার (৩১ মার্চ) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল একদল পাহাড়খেকো। খবর পেয়ে বনবিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজলসহ কয়েকজন বনকর্মী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনিসহ মোটরসাইকেল আরোহী দুইজনকে পাচারকারীদের মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক চাপা দেয়। এতে সাজ্জাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে মারা যান এবং মোহাম্মদ আলী নামের এক বনরক্ষী আহত হন।

এ ঘটনায় সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে বন বিভাগের উখিয়া রেজ্ঞ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে ও ডাম্পার ট্রাকচালক মো. বাপ্পী (২৩), একই এলাকার সুলতান আহম্মদের ছেলে ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ (৪০) ও তার ছেলে মো. তারেক (২০), রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নুরুল আলম মাইজ্জার ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭), হরিণমারা এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ছৈয়দ করিম (৩৫), একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (৩৫), আব্দুর রহিমের ছেলে শাহ আলম (৩৫), হিজলিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (৫০), একই এলাকার ফরিদ আলম ওরফে ফরিদ ড্রাইভারের ছেলে মো. রুবেল (২৪) এবং হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার (৩৯)।

মামলায় অজ্ঞাতনামা আর ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে এজাহারভূক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিম (৩৫)। আর হত্যার নয় দিনের মাথায় মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে।

ঘটনায় আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মজ্ঞুরের ছেলে।

ওসি শামীম হোসেন বলেন, ১ এপ্রিল বন বিভাগের উখিয়া রেজ্ঞের এক কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় রেঞ্জার বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ মামলাটি নথিভূক্ত করে। এ ঘটনায় প্রধান আসামিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৩১ মার্চ দুপুরে বিভাগীয় বন কার্যালয়ে প্রথম জানাজা শেষে নিহত সজলকে নিজ বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছে এশার নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এরপর তার সহকর্মীরা বিভাগীয় বন কার্যালয়ের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত দীর্ঘ মানববন্ধন করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করা হয় মানববন্ধনে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, গ্রেফতার, মামলা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন