খাগড়াছড়িতে সৎ মায়ের নির্যাতনে ঘর ছাড়া তরুণী গণধর্ষণের শিকার, আটক ৩

খাগড়াছড়িতে ২০ বছর বয়সি এক তরুণীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। টানা কয়েকদিন আটকে রেখে তাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে জানায় ভুক্তভোগী ওই তরুণী। ইতোমধ্যে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ভুক্তভোগী তরুণী খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের গোরাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী জানান, সৎ মায়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) জেলার মাটিরাঙ্গার গৌরাঙ্গ পাড়ার বাসা পালিয়ে খাগড়াছড়ি চলে আসে। শহরের জিরোমাইল এলাকায় এসে একটি ঘরে কাজের সন্ধান করতে থাকে। সেখান থেকে এক নারী চার হাজার টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাকে খাগড়াছড়ি সদর ইউনিয়নের গামারিতলা এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ওই নারী মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করে।
খাগড়াছড়ি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল’র ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম অফিসার রনজিৎ সরকার ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানায়, ঐ তরুনীকে খুন করে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন জনকে ভিডিও কলে দেখায়। পরে টানা কয়েকদিন তাকে বিভিন্ন লোক এসে খারাপ কাজ করে। এ সময় প্রায় ১০ জন তাকে ধর্ষণ করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে এক বৃদ্ধ লোক ওই ঘরে গিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।
পরে বাজারে আসলে এক আপাকে ঘটনা খুলে বললে তিনি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান।
স্থানীয় বিচিতলা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সুমি আক্তার তরুণীকে নিজ বাসায় নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, বিকেল ৫টায় বাজার করে ফেরার পথে মেয়েটিকে দেখতে পাই। তাকে কোত্থেকে আসছে জানতে চাইলে সে কান্নাকাটি করে এবং বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমি তাকে বাসায় নিয়ে আসি। পরে সে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। বিষয়টি আমার এক আপার সঙ্গে পরামর্শ করে সকালে দুইজন মিলে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
জিরো মাইল প্রথমে যে বাসায় মেয়েটি কাজের সন্ধানে যায় সে বাসার মালিক মাওলানা শফিকুল ইসলাম আলী বলেন, আমার স্ত্রীর কাছে এক মেয়ে কাজের সন্ধানে আসে। তার সাথে একজন মধ্য বয়স্ক নারীও ছিল। ওই নারী মেয়েটিকে কাজে রাখার বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। কিš‘ এত টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই, তাছাড়া মেয়েটিকে অপ্রকৃত¯’ মনে হওয়ায় আর রাখিনি। এরপর তারা চলে যায়।
ঘর থেকে পালানো বিষয়ে তরুণী জানায়, ছোটবেলায় তার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আরেকটি বিয়ে করে। যখন তখন সৎ মা তাকে নির্যাতন করতো। নির্যাতনের ঘটনায় সৎমা জেলও খাটেন। চার মাস আগে বাবা আত্মহত্যা করেন। এরপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।
খাগড়াছড়ি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম অফিসার রনজিত সরকার এ ঘটনাকে চাঞ্চল্যকর ও অমানবিক দাবী করে বলেন, অভিযুক্তরা যাতে দ্রæত আইনের আওতায় আসে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের যেন বিচার হয়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান মুঠোফোনে ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পরপরি জড়িত ৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্য জড়িতদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।