চাকমা মেয়েদের সৌন্দর্যের রহস্য

fec-image

বাংলাদেশে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর থেকে পাহাড়ে বসবাসরত চাকমা জনগোষ্ঠীর মেয়েরা বেশিই সুন্দরী হয়ে থাকে। তাদের শারীরিক গঠন খুব ফর্সা ও পাতলা হয়ে থাকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক চাকমা মেয়েদের সৌন্দর্যের রহস্য-

সাধারণত শিশুকাল থেকে চাকমা নারীদের সৌন্দর্য বিকশিত হতে থাকে। বংশগতভাবে চাকমা নারীদের শারীরিক গঠন ফর্সা এবং পাতলা হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকে তারা নিজস্ব সংস্কৃতি, ধারা ও পরিবেশে বড় হয় যা তাদের সৌন্দর্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে রাখে। মূলত শরীরের রঙ কালো অথবা ফর্সা হওয়া নির্ভর করে মেলানিনের উপস্থিতির উপর।

চাকমাদের শরীরে মেলানিনের পরিমাণ অন্যদের থেকে কিছুটা কম। কারণ তারা যে অঞ্চলে বসবাস করে সেখানে সূর্যের তাপ কম হয়। ফলে আল্ট্রাভায়োলেটও কম পড়ে। আর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি কম পড়লে ত্বকে মেলানিনের প্রয়োজন কম হয়। তাই গায়ের রঙ হয় ফর্সা। অবশ্যই তাদের সৌন্দর্যের আরো একটি কারণ হলো পাহাড়ের নান্দনিক পরিবেশ। যা দেশের অন্য যেকোন পরিবেশের থেকে আলাদা।

চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা মিশে গেছে পাহাড়ি রুপ, রং আর গন্ধে। পাহাড়ের প্রকৃতির সান্নিধ্য তাদের করে তোলে এক অন্য আদলের মানুষ। সেখানে দূষণমুক্ত পরিবেশ আর সতেজ ছোঁয়া তাদের শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে।

অন্যদিকে পাহাড়ের কোলে বাস করা চাকমাদের স্লিম থাকার রহস্য হলে ধরা বাঁধা জীবন যাপন। চাকমা মেয়েরা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে। পুরুষতান্ত্রিক হলেও চাকমা সমাজে মেয়েদের গুরুত্ব অনেক বেশি।

মেয়েরা চাষ-বাস থেকে শুরু করে সকল কাজেই অগ্রগামী। জুম চাষে চাকমা মেয়েরা পুরুষের থেকে বেশি ভূমিকা রাখে। জুম ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে আগাছা দমন, ফসল কাটা এমনকি ফসল কাটার পরও বাজারে নিয়ে বিক্রি করার ভূমিকা রাখে চাকমা মেয়েরা।

শুধু পরিশ্রমেই নয়, তারা নৃত্য ও গীতেও বেশ পারদর্শী। ফলস কাটার পর বিজু উৎসবের সময় নাচ-গানে মাতিয়ে রাখে চাকমরা মেয়েরা। যা তাদের মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। মানসিক চাপ কম থাকলে ত্বকের ওপর এর ভালো প্রভাব পড়ে। এছাড়া জাতিগত সক্রিয়তা ধরে রাখতে চাকমা মেয়েরা নিজ গোত্রের বাইরে বিয়ে করে না। বংশ পরম্পরায় একই সৌন্দর্য ধরে রাখার এটিও একটি কারণ।

চাকমানের সৌন্দর্যের আরো একটি কারণ হলে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস। চাকমা সমাজ কৃষি নির্ভর হওয়ায় খাবারে বেশির ভাগ সময় মাছ ও শাকসবজি থাকে। মাংস বা মসলা জাতীয় খাবার থাকলেও তা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে তাদের শরীরে মেদ জমার সুযোগ হয়না।

এছাড়া চাকমারা রান্নায় কম ভোজ্য তেল ব্যবহার করে বলে অন্যান্য জাতির তুলনায় তাদের শরীরে এতো কোলেস্টেরল থাকে না। তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যায় বেশি। রাঙামাটি জেলায় চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানেও বেশকিছু চাকমা বসবাস করে।

চাকমা সমাজে নিজেদেরকে বলে চাঙমা। চাকমা নারী-পুরুষের পোশাকে রয়েছে বেশ বৈচিত্রতা। চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রের নাম পিনোন হাদি, যা বিভিন্ন নকশা ও সুতার মিশ্রণে বোনা হয়ে থাকে। পোশাকের নিচের অংশকে পিনোন, যা কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত এবং ওপরের অংশকে হাদি বলা হয়। পিনোনের সঙ্গে চিবুকি নামক সুন্দর নকশাযুক্ত আচল থাকে। পাশাপাশি সোনা, রুপা, নেকলেস, বালার মতো অলঙ্কার পরতে পছন্দ করে চাকমা নারীরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চাকমা, সৌন্দর্যের রহস্য
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন