টেকনাফে গোপন আস্তানা থেকে অপহৃত ১৪ জনকে যেভাবে উদ্ধার করল বিজিবি


কক্সবাজারের টেকনাফে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের গোপন আস্তানায় ১৮দিন বন্দী থাকার পর ১৪ জন অপহৃতকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী এলাকা সাইফুল ইসলামের জিম্মি ঘর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তাদের সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় পাচারের জন্য ১৪ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।
উদ্ধারকৃত অপহৃতরা হলেন, আকতার হোসেন (২২), সাইফুল ইসলাম (১৬), খায়ের হোসেন (১৮), মোঃ রশিদুল ইসলাম (১৯), মোঃ আয়াজ (১৮), মফিদুল রহমান (১৫), শাহারিয়া মোহাম্মদ (১৯), মোঃ মোজাহের (২৮), মোঃ কায়ছার (২৩), লুৎফর রহমান কাজল (১৭), সিরাজুল হক (২৪), মোঃ আবু তালেব (৩৬), মোঃ কাসেম (২৬)ও মহিউদ্দীন বাবু (১৭)। তারা সকলেই বাংলাদেশী নাগরিক এবং বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
রবিবার (১১মে) বিকালে টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ান বিজিবি হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান এ তথ্য অবহিত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিজিবির সহকারী পরিচালক শেখ মনোয়ার ইসলাম।
উদ্ধার হওয়া মোহাম্মদ কাসেম ও মাহিন উদ্দিন নামে দুজন জানান, আমরা ইনানীতে বেড়াতে এসেছিলাম। সেখান থেকে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের প্রলোভনে টেকনাফে গেলে আমাদের অপহরণ করে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আরও বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
আমাদের মারধর করে পরিবারের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে এক লাখ টাকা আদায় করা হয়। এর পরও ১৮ দিন ধরে আমাদের জিম্মি করে রাখা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাগরপথে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার পাচারের জন্য দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া। অবশেষে বিজিবি এসে আমাদের উদ্ধার করে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন,শনিবার রাতে তারই নেতৃত্বে বিজিবি একটি বিশেষ টহলদল সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লেঙ্গুর বিল এলাকায় মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলামের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ১৪ জন অপহৃত বাংলাদেশী নাগরিককে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃতদের কাছ থেকে জানা যায় চক্রটি দালালদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে টেকনাফে নিয়ে আসে। পরে সুযোগ বুঝে টেকনাফ ও মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্থান হতে তাদেরকে অপহরণ করে দুর্গম লুকায়িত স্থানে আটকে রাখা হয়েছিল।
তারপর থেকেই অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। এছাড়াও মুক্তিপণ আদায়ে অপহরণকারী চক্রটি ভুক্তভোগীদের উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতনও করেছে।
অত্যাচারের এ সকল অমানবিক ভিডিও চিত্র ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণের টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হতো।
তিনি আরও বলেন, অপহরণকারী চক্রকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ্য, মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল এলাকার মৃত হাফেজ আহমদের ছেলে মো.সাইফুল ইসলাম (৩৯)-এর নেতৃত্বে একটি চক্র এদের জিম্মি করেছিল। এই সাইফুল ইসলামসহ পাচারকারী চক্রের সদস্য আটক করতে গত ২৪ এপ্রিল গভীর সাগরে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ সময় টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়,তবে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মানব ও মাদক পাচারের দায়ে মামলা দায়ের করা হয়।