দুই গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বিরোধ নিষ্পত্তি করলেন এমপি কমল
কক্সবাজারের রামুতে দুই গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। এলাকার বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে কয়েকদিন নিজে উপস্থিত থেকে হাজারো জনতার উপস্থিতিতে এ বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এমপি কমলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া স্বস্তি ফিরেছে দুই গ্রামের হাজারো মানুষের মাঝে।
জানা গেছে, রামুর তেচ্ছিপুল এলাকায় তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গুজবের ঢালপাড়া ছড়ালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তেচ্ছিপুল ও পার্শ্ববর্তী সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তেচ্ছিপুল স্টেশনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের অনেকে গুরতর আহত হন। ঘটনার পরপরই সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওইদিন রাতেই এমপি কমল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে দুপক্ষের এ বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে তেচ্ছিপুল স্টেশনে বিশাল সামিয়ানা টাঙিয়ে দুই গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে সভা আহ্বান করা হয়।
রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম জানান, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল কয়েকদিন নিজে উপস্থিত হয়ে এবং বিভিন্নভাবে তদন্ত করে ঘটনাটি নিষ্পত্তি করে বিবদমান দুই গ্রামবাসীর মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেন। এমপি কমলের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সর্বত্র সাড়া জাগিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, ওই সভায় এমপি কমলের নেতৃত্বে উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সংঘর্ষে জড়ানো দুই গ্রামবাসী, আহত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যসহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে দোষী ব্যক্তিদের আর্থিক জরিমানা করেন। এছাড়া এলাকায় যে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হলে তা নিয়ে গুজব না ছড়ানোর জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়।
অনুষ্ঠানে এমপি কমল দুই গ্রামবাসীকে আগের মতো শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে এলাকার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানান। এসময় দুই গ্রামবাসী নিজেদের ভুল বুঝতে পেয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘাতে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকার করেন।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো বলেন, একটি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে তা বিচারিক পর্যায়ে ছিলো। কিন্তু কিছু ক‚চক্রী ব্যক্তি তা নিয়ে সাজানো গুজব রটিয়ে দুই গ্রামবাসীকে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে ইন্ধন দিয়েছে। তিনি সবাইকে দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার অনুরোধ জানান।
বৈঠকে এমপি কমল ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল গফুর কোম্পানি, জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম কোম্পানি, রামু থানার এএসআই শাহাদাৎ, কক্সবাজার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিরসহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম, খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজিবুল আলম, মো. জামাল উদ্দিন, কোম্পানি, জাহাঙ্গীর হোসাইন, চাকমারকুল ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন, সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ, ফতেখাঁরকুল ইউপি সদস্য দিদারুল আলম, সাবেক ইউপি সদস্য মনির আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. ইলিয়াছ প্রমুখ।
বৈঠকে জনতার সামনে সংঘর্ষে জড়িতরা প্রদত্ত শাস্তি (অর্থদণ্ড) মেনে নিয়ে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে এ ধরনের সংঘাত থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দেন।
এমপি কমলের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে এলাকাবাসী জানান, এভাবে কোন জনপ্রতিনিধি অতীতে মানুষের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেনি। এটা রামুবাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।