পাহাড়ে বিলুপ্তির পথে বাঁশ : মূল কারণ অবাধে বাঁশকরুল নিধন
দিদারুল আলম রাফি:
পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলাসহ জেলার ৯টি উপজেলা এবং পার্বত্য ৩ জেলার হাট-বাজারসহ প্রত্যন্ত বিভিন্ন জনপদে কাঁচা তরি-তরকারীর পাশাপাশি সুস্বাধু খাবার হিসেবে অবাধে বাঁশকরুল (কচি বাঁশ) আহরনের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের ফলে ব্যাপক হারে ব্যাহত হচ্ছে বাঁশের বংশ বিস্তার।
পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত অধিকাংশ উপজাতি জনগোষ্ঠীর কাছে অধিক প্রিয় হয়ে উঠেছে বাঁশকরুল। ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও উপজাতীয় উন্নত হোটেলগুলোতে অন্যতম একটি খাদ্য হিসেবে। অবাধে খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের কারণে তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমান বাঁশ ধ্বংস হচ্ছে। ফলে দিন দিন বাঁশের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে শূন্য হতে চলছে পার্বত্য এলাকার বাঁশ সম্পদ।
বাঁশ উৎপাদন কম হওয়া ও বাঁশকরুল খাবার হিসেবে ব্যবহার রোধ করা না গেলে কাঁচামাল সংকটে পড়তে পারে কেপিএম। এমনটাই মনে করছেন পাহাড়ের সচেতন মহল। ইতিমধ্যে দেশের বিখ্যাত চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে কাগজ তৈরির অন্যতম কাঁচামাল বাঁশের সংকটে কাগজ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিন পার্বত্য জেলায় প্রাকৃতিকভাবে বিপুল পরিমান বাঁশ জম্মে। এই বাঁশকে কেন্দ্র করে চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। এক সময় পার্বত্যঞ্চল থেকে চাহিদা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ প্রচুর পরিমাণে বাঁশ সংগ্রহ করে কাগজ উৎপাদন হয়।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ দেশের সমতল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে সরবরাহ করা হয়ে থাকতো। যা থেকে প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জনসহ অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাগজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী কাগজ তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে ধস নেমেছে।
বাঁশ সংকটের মূল কারণ হিসেবে সংস্লিষ্ঠরা অবাধে বাঁশকরুল নিধন ও বাঁশের ফুল আসাকে চিহ্নিত করেছে। জানা গেছে প্রতি ৫০বছর পর পর বাঁশের ফুল ও ফল ধরে এবং তখন কোটি কোটি বাঁশ ধ্বংস হয়ে যায়। গত কয়েক বছর আগে এভাবে বাঁশের ফুল ফোটায় পার্বত্যাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ বাঁশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার এমন কোন বাজার নেই যেখানে বাঁশকরুল বিক্রি হচ্ছে না। ইতিমধ্যে উপজাতিদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছে এই বাঁশকরুল খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে প্রতিদিন লাখ লাখ বাঁশের চারা ধ্বংস হয়ে চলেছে। একটি বাঁশের চারা বড় হয়ে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে হাজার বাঁশ জম্মে থাকে।
বাঁশকরুল খাদ্য হিসেবে ব্যাবহারের মাধ্যমে বাঁশের বংশ বিস্তার ব্যাহত করা হলে এক সময় পার্বত্য এলাকা বাঁশশূন্য হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই পাহাড় থেকে বাঁশ নিধন রোধে বসবাসকারী সকল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর প্রয়োজন।