পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআরদের স্মারকলিপি প্রদান
‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় আমার বয়স ৩ বছর। ওই ঘটনার পর বাবা চাকরিচ্যুত হয়। এরপর বাবাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। ৪ বছর সাজাকালীন বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবা ছাড়া অনেক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। আজ বেচেঁ থাকলে ন্যায্য দাবিতে আঙ্কেলদের সাথে বাবাও অংশগ্রহণ করতেন। তাই এই দাবিগুলো পূর্ণ হলে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজার। এসময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তৎকালীন বিডিআর এরে সৈনিক কাঞ্চন ভট্টাচার্যের মেয়ে শমা ভট্টাচার্য।
২০০৯ সালে চাকুরিচ্যুত সকল বিডিআর সদস্যদের পক্ষে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজারের পক্ষে হাবিলদার মো. একরামুল হুদা এই স্মারকলিপি দেন। এতে বলা হয়, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার একটি দেশকে সন্তুষ্ট করতে, সেনাবাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন ও বাংলাদেশ রাইফেলসকে (বিডিআর) ধ্বংস করে নিজেদের ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করতে সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়েছেন।
স্মারক লিপিতে আরও বলা হয়, বলা হয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ফ্যাসিস্ট সরকার প্রহসনের বিচারের নামে আলামত ধ্বংস ও নিরীহ ৫৪ বিডিআর সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যা করেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে তথাকথিত ‘বিডিআর বিদ্রোহের’নামে সংজ্ঞায়িত করে ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও তাঁদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্মারক লিপিতে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি জানানো হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পিলখানার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে কথিত বিদ্রোহ না বলে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। ওই ঘটনায় গঠিত সব প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল করতে হবে। চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
দাবিতে আরও রয়েছে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ও কুশীলবদের চিহ্নিত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। পিলখানায় শাহাদাতবরণকারী ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দিনকে ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও জানান পরিষদের নেতারা।
এতে বলা হয়, যেসব নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের তালিকা করে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, হত্যাকাণ্ডে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগকারীদের জামিন ও মামলা হতে অব্যাহতিসহ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
এসময় বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজারের উপদেষ্টা হাবিলদার শামসুল হক, মো. শফিউল আলম, মো. কামাল হোসেন, সভাপতি হাবিলদার মো. একরামুল হুদা সাধারণ সম্পাদক ল্যান্স নায়েক নুরুল আবছারসহ চাকরিচ্যুত বিডিআর ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
