বিশ্ব শরণার্থী দিবস: মর্যাদা নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা
২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়।
বিশ্ব শরণার্থী দিবস সম্পর্কে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অনেকে বলেছেন, নিপীড়নের শিকার হয়ে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছি। জীবন ধারণের উপকরণসহ সবদিক দিয়ে সুখে থাকলেও মনটা পড়ে আছে রাখাইনে। তবে মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর জমি ফেরত পাবার নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলে ফেরত যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা আগমন: ১৯৭৮ সালে শুরু। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে রয়েছে। এটি বিশ্বের ইতিহাসে শরণার্থী সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূলত যুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসই সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ। রোহিঙ্গারাদের দাবি, শুধু প্রতিবছর শরণার্থী দিবস পালনে তারা অংশীদার হতে চান না। নিজ দেশে ফিরে বাংলাদেশের বোঝা হালকা করতে চান তারা।
উখিয়ার ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্প নেতা মো. হাশেম বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। গরমে রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার। তবে এবার মর্যাদা নিয়ে ফিরবো, যাতে ফেরত আসতে না হয়।
টেকনাফ চাকমারকুল ক্যাম্পের ছৈয়দুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে কেবল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে।
উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদ বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হওয়া নিয়ে আমরা সন্দিহান। আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠন নিজ স্বার্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা দেখিয়ে সুবিধা আদায় করছে তারা। আমাদের দাবি সরকার আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালু করার৷ অথবা ভাসানচরের মতো আরও অন্যান্য এলাকা রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর চৌধুরী বলেন, নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের জয়েন ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন দিনও হবে না।
গণমাধ্যমকর্মী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে নানা তৎপরতা সত্তেও মিয়ানমারের অসহযোগিতায় প্রত্যাবাসন এখনো নিশ্চিত হয়নি। অনেকেই মনে করেন মিয়ানমারের ছলচাতুরিতে আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)’র কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, এবার বিভিন্ন কারনে বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আইওএম কোন প্রোগ্রাম নেই।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) শামসুদ্দৌজা বলেন, কোভিড-১৯ এর কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোন ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ আর প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এই মুহুর্তে কিছু মন্তব্য করা যাচ্ছেনা।