মাটিরাঙ্গায় কঙ্কাল উদ্ধারের তিন মাসের মাথায় ঘাতক স্বামী আব্দুল কাদের গ্রেফতার

fec-image

স্ত্রীকে হত্যার পরে লাশ গুম করার তিন মাস পরে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ঘাতক স্বামী মো. আব্দুল কাদের (৪২)। পুলিশী তৎপরতায় পালিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। একটি কঙ্কাল থেকে লাশের পরিচয় শনাক্ত এবং সে সুত্র ধরে ঘাতককে গ্রেফতারের মাধ্যমে পুলিশ আবারো তাদের পেশাদারিত্বের প্রমান দিয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামানের নির্দেশনায় এবং মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সামছুদ্দিন ভুইয়ার তত্বাবধানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মামলার সন্দেহভাজন মো. আব্দুল কাদেরকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পানছড়ি থেকে আটক করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহানুর আলম’র নেতৃত্বে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।

জানা গেছে, গেল ১ আগষ্ট স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির চোংড়াকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে এক কঙ্কাল উদ্ধার করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মাটিরাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেন।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহানুর আলম দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করেন। তদন্তকালে সন্দেহের তীর ঠেকে গোমতির বান্দরছড়ার মৃত: আবু খাঁ’র ছেলে মো. আব্দুল কাদেরের দিকে। তাকে গ্রেফতার করতে পতেঙ্গা, ইপিজেটসহ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।

অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার অবস্থান শনাক্ত করে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে পানছড়ি বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘাতক মো. আব্দুল কাদের। গ্রেফতারের পর শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানন্ধি প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সামছুদ্দিন ভুইয়া।

উল্লেখ্য, লক্ষীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের মোস্তফা সর্দারের মেয়ে মাইনুর বেগম (২৩) চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টে চাকরী করতো। গার্মেন্টে চাকুরীর সুত্র ধরে প্রথমে পরিচয়, প্রেম ও পরে বিয়ে হয় মো. আব্দুল কাদেরের সাথে। বিয়ের পর থেকেই চট্টগ্রামের ফ্রি-পোর্ট এলাকার মাইলের মাথা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো তারা।

রমজানের ঈদ উপলক্ষে ৮ জুন স্ত্রী মাইনুর বেগমকে নিয়ে গোমতির বান্দরছড়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে মো. আব্দুল কাদের। দুই দিন পরে ১০জুন সকাল ১১টার দিকে স্ত্রীকে পাহাড় দেখাতে নিয়ে যায় মো. আব্দুল কাদের।

একপর্যায়ে আর্থিক বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হলে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আব্দুল কাদের। এসময় তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চোংড়াকাপার গভীর জঙলে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতক আব্দুল কাদের।

হত্যাকান্ডের দুই মাসের মাথায় মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির চোংড়াকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে এক কঙ্কাল উদ্ধার করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন