রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি পালিত

যাদের সাথে চুক্তি করা হয়েছে, তাদেরকেই বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ সংগঠন : ঊষাতন তালুকদার

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ- সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, যাদের সাথে চুক্তি করা হয়েছে, আজ তাদেরকেই বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ সংগঠন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটি কুমার সুমিত রায়, জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় গণসমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য শ্যামরতন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মাইদুল ইসলাম, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউণ্ডেশনের আহ্বায়ক বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুবসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জুয়েল চাকমা প্রমূখ।

ঊষাতন তালুকদার বলেন, সরকার পক্ষের কেউ কেউ আবার আমাদের পক্ষের অনেকেই বলে পার্বত্য চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। আবার আমরা বলি চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু আসলে মানুষ এখন অশিক্ষিত হলেও বেকুব নয়। একবিংশ শতাব্দীর যুগে এখন কেউ বেকুব নয়। তাই বিষয়গুলো বলাটা মানে নিজেদের অজ্ঞানতায়ই প্রকাশ করা।

তিনি আরো বলেন, ২২ বছর আগে পার্বত্যাঞ্চলে যে অশান্ত পরিবেশ, এখানে যে অনিয়ম, বিভিন্নভাবে অভিযোগ এ সব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকারের সাথে চুক্তি হয়েছে। সরকার পক্ষ এবং পার্বত্যবাসীর পক্ষে হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

চুক্তিতে অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশ শাসনের জন্য পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে শাসনতান্ত্রিক অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিমত ও মতামত এখানকার মানুষের ছিল না। সেটি যাতে থাকে, সে উদ্দেশ্য নিয়ে এবং অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম যাতে স্থায়ীভাবে শান্ত হয় এবং শান্তি স্থাপিত হয় সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এ চুক্তি হয়েছে।

গণসমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তিকে মেলায় পরিণত করেছে। চুক্তির পরও আদিবাসীদের সংখ্যালঘু হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং পর্যটন শিল্প গড়ার নামে লক্ষ লক্ষ সাধারণ জনগণকে নিজেদের মাতৃভূমি হতে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা শুরু করেছে।

তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, সরকার যদি পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করে তাহলে জন সংহতি সমিতি বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবে। পার্বত্য চুক্তি না হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণ হতাশা ও অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

চুক্তি বাস্তবায়ন না করার জন্য জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীদরে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশ ছাড়া করছে বলেও অভিযোগ করা হয় সমাবেশে থেকে।

অপরদিকে, সকালে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট এর সম্মেলন কক্ষে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি পালন করেছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এই উপলক্ষে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।

এ সময় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পনিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইনুর রহমান, জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার আলমগীর কবির, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হাজী কামাল প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছে এ সরকারই তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেছে। সরকার ভূমি কমিশন আইন পাশ করেছে। শান্তিচুক্তির বাকি অংশগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

এছাড়া সোমবার বিকালে রাঙ্গামাটি চিংহ্লা মং মারী ষ্টেডিয়ামে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও রাঙ্গামাটি রিজিয়নের উদ্যোগে দেশের স্বনামধন্য ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন