নিরাপত্তা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে পাথর উত্তোলন
থানচি প্রতিনিধি:
বান্দরবানে রোয়াংছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে আলেক্ষ্যং ও পানঁতলা মৌজা সীমান্তে ডলু ঝিড়ি ও সাকলাই ঝিড়ি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে একটি চক্র। চক্রটি রোয়াংছড়ি থেকে এসব পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্তারা রহস্যজনক কারণে এসব দেখেও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কোন অনুমোদন না থাকায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য ও ঝিড়ির নাব্যতা হারিয়ে জনদূর্ভোগ চরম আকারে ধারণ করছে। ডলু, সাকলাই ঝিড়িতে উপজাতীয় জনগোষ্ঠি অর্ধশতাধিক বসবাসকারীদের পানীয় জল ব্যবহার, স্থানীয় হাট বাজার, স্কুল কলেজের যাওয়ার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাথর পরিবহন করায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাফেজ ঘোনার বাসিন্দা জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বশর কোম্পানি ওরফে (বশর ড্রাইভার) নিরাপত্তাবাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে, সরকার দলীয় নেতাদের ছত্রছায়া রোয়াংছড়ি তাড়াছা ইউপি আলেক্ষ্যং মৌজা ও গ্যালেংগা ইউপি পাঁনতলা মৌজা সীমান্তে গভীর অরন্যে ডলু ঝিড়ি ও সাকলাই ঝিড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাথর ভাঙ্গা ও পরিবহন শ্রমিকের ১০ জনের একটি গ্রুপের প্রধান রহমত উল্লাহ জানান, বান্দরবানের হাফেজ ঘোনার বাসিন্দা বশর কোম্পানির নির্দেশক্রমে কাজ করছি। পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের পারমিট বা অনুমোতির ফটোকপি আমাদেরকে প্রমাণস্বরূপ দেওয়ার জন্য বলেছিলাম, কিন্তু প্রয়োজন পড়বে না বলে জানিয়ে বশর কোম্পানি আমাদের তা দেয়নি।
ডলু পাড়া বাসিন্দা চনুমং মারমা জানান, অক্টোবর থেকে মৌজা হেডম্যান ও বশর কোম্পানি গংদের শতাধিক শ্রমিক পাথর উত্তোলন করছে। ফলে সাকলাই ঝর্ণার পানি উৎসের প্রবাহ শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে ডলুঝিরির পর্শ্ববর্তী দু‘টি উপজাতীয় মহল্লার ৮০ টি পরিবারকে ভবিষ্যতে এলাকা ছাড়তে হতে পারে।
মুঠো ফোনে যোগাযোগে মোহাম্মদ বশর কোম্পানি (বশর ড্রাইভার) বলেন, আমি পাথর উত্তোলন করি না এবং এ বিষয়ে আমি জানি না।
আলেক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান ও বিএনপি নেতা পুমুই হেডম্যান প্রকাশ ব্রিগেডিয়ার তার মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয় নি।
ডলুঝিরি পাড়াবাসিন্দা সুইসিঅং ও সাবেক ইউপি মেম্বার থুইসাচিং জানান, আমাদের পানীয় জল ব্যবহার, স্থানীয় হাট বাজার, স্কুল কলেজের যাওয়ার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাথর পরিবহন করায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে আছি। বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র অংচিসা বলেন, বারুদ ও বিষ্ফোরক দিয়ে পাথর উত্তোলন প্রশাসনিকভাবে বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে আমাদেরকে চিড়িয়াখানায় দেখতে পাবেন।
রোয়াংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ওমর আলী বলেন, পাথর উত্তোলনের বিষয়ে জানি কিন্তু থানা সদর থেকে অনেক দূর। এ দূর্গম পথ পেরিয়ে আমাদের পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ওই অঞ্চলে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাথর উত্তোলনে প্রশাসনিকভাবে পারমিট অনুমোদন করা হয়নি। পারমিট ছাড়া পাথর উত্তোলন করায় সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই এটি বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।