সৌদিতে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

fec-image

সৌদি আরবে অবস্থানরত ৫৫ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠাতে চায় বলে জানা যায়। এমন খবরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন তাদের ফেরত পাঠাতে নয়, সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে বলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সৌদি আরব রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে চায় এটা ঠিক না, এই তথ্যটি ভুল। তারা সেখানেই থাকবেন।

তিনি জানান, সৌদি আরব বিভিন্ন সময়ে বহু রোহিঙ্গা নিয়েছে। কিছু তারা নিয়েছে এবং কিছু বিভিন্ন উল্টাপাল্টা করে চলে গেছে। ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন সৌদি বাদশাহ বললেন যে তার দেশে রোহিঙ্গারা থাকবেন। ৭০ দশকের শেষে, ৮০ এর দশকের শুরুতে অনেক রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গেছে। ওখানে গিয়ে তারা থাকছেন। তাদের ছেলে-মেয়ে হয়েছে। ৩০-৪০ বছর ধরে তারা ওখানে আছেন। ছেলে-মেয়ে জীবনে বাংলাদেশ দেখে নাই। তারা বড় হয়েছেন। বৃদ্ধ হয়েছেন। এখন সৌদি আরব বলছে, তাদের দেশে নাগরিকত্ববিহীন কাউকে রাখবে না। তারা সহজে কাউকে নাগরিকত্ব দেয় না বলে তারা একটা প্রস্তাব করছে যে, এই লোকগুলোকে তারা পাঠাবে না। তাদের যদি নাগরিকত্ব দেয়া হয় ওই দেশেই (সৌদি আরব) থাকবে। শুধু তারা জেলে থাকা ৪৫২ জনকে পাঠাবে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে কেউ গিয়ে থাকলে তাদের পাসপোর্ট অবশ্যই রিনিউ করব।

মন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে কেউ গিয়ে থাকলে তাদের পাসপোর্ট অবশ্যই আমরা রিনিউ করব৷ আর তাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট না থাকলে আমরা পরীক্ষা করব৷ একদম ওয়ান টু ওয়ান যাচাই বাছাই করে দেখব যে, তারা বাংলাদেশে কোনোকালে কোনোভাবে ছিলো কিনা, তাদের লিগ্যাল স্ট্যাটাস কী? সেটা যদি থাকে তাও আমরা তাদের কনসিডার করব৷ যদি সে আমাদের দেশ থেকে না গিয়ে থাকে তাহলে আমরা তাদের গ্রহণ করব না৷

জরিপে অংশ নেয়া রোহিঙ্গাদের ১০ জনের ৪ জন ক্যাম্পে তাদের থাকার জায়গা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ দশ জনের ৬ জন অসন্তোষ বা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তবে ৯৩ ভাগই মনে করেন, ক্যাম্পের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর৷ ৯৭ ভাগই স্বাস্থ্যসেবার পর্যাপ্ত সুবিধা আছে বলে জানিয়েছেন৷ কিন্তু ৪৭ ভাগই ক্যাম্পে বাড়ির মতো অনুভব করেন না৷

পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে৷ কমিটি সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে৷ বাংলাদেশ তার এই অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও কথা হয়েছে৷ তারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন৷

কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছেন তার কোনো সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভুয়া পাসাপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন বলে জানান তিনি৷

তিনি বলেন, আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি যে ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৬ সালে বহু রোহিঙ্গা ভুয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন৷ চট্টগ্রাম থেকেও বহু রোহিঙ্গা গেছেন৷ বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা ঘুষ খেয়ে তাদের পাসপোর্ট দিয়েছেন৷ দূতাবাসের অফিসারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে যে তারা পাসপোর্ট দিয়েছেন৷

তবে তিনি জানান, এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় খুব কড়া৷ কোনও ছাড় দেয়া হচ্ছেনা৷ এটা নিয়ে তদন্তের প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্ত না, এবার আমরা অভিযোগ পেলে সাথে সাথে তাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি৷ একজনের বিরুদ্ধে শুনেছি, তাকে বাদ দিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু কোথায় যে কে লুকিয়ে থাকে জানা কঠিন৷ এটা যে সব সময় বড় অফিসারেরা করেন তা নয়, অনেক সময় ছোট স্টাফরাও করেন৷ এখানে অনেক দুষ্ট লোক আছে৷ তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি৷ ‘দুষ্ট’ লোকদের চিহ্নিত করতে সংবাদমাধ্যমেরও সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন