২৪ ঘণ্টা বন্ধের পর তুমব্রু সীমান্তে ফের গোলাগুলি, আতঙ্কে বাসিন্দারা

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের মিয়ানমার অংশে আবার গোলাগুলি হচ্ছে; এতে সীমান্তের এপারের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে আটটার দিকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। তবে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শূন্যরেখার আশপাশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র দুই পক্ষের গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে।”

তবে সীমান্ত পরিস্থিতি শুক্রবার দিনভর শান্ত থাকার কথা বললেও নতুন করে গোলাগুলির খবর অবহিত নন বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা।

মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গ্রুপ আরসা ও আরএসও বুধবার ঘুমধুমের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় সংঘর্ষে জড়ায় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শূন্যরেখায় এ গোলাগুলি হয়। ওই দিন হামিদ উল্লাহ (২৭) নামের একজন মারা যান। শিশুসহ দুজন আহত হন। গোলাগুলির পর ওই দিন বিকেলের দিকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগানো হলে সাড়ে পাঁচ শতাধিক বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণ রক্ষায় অনেক রোহিঙ্গা কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে এবং আরও কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের তমব্রু স্কুলে আশ্রয় নেন। ওই শিবিরে ৬২১টি বসতঘরে ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা ছিলেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, হঠাৎ করে শুক্রবার রাতে গোলাগুলি আবার শুরু হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, কিছুই জানা যায়নি। গোলাগুলিতে স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গারা আতঙ্কে আছেন।

সীমান্তের উদ্ভূদ পরিস্থিতি সম্পর্কে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, “আপাতত আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা কড়া নজরদারিতে ঘিরে রেখেছেন। এ ছাড়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।“ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ইউএনও।

এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্যাম্প থেকে কেউ বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরে থেকে কেউ ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে।”

১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, “বর্তমানে ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা কঠোরভাবে বাড়ানো হয়েছে। কাউকে ক্যাম্পের ভেতর থেকে বাইরে, বাইরে থেকে ভেতরে আনাগোনা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্যাম্পের প্রতিটি প্রবেশ পথে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরেও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।”

৮ এপিবিএন এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন, “নতুন করে সীমান্তে সংঘাতের জেরে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ক্যাম্পের প্রবেশ পথে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্ক, গোলাগুলি, তুমব্রু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন