টেকনাফে ৫ শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে

fec-image

টেকনাফে ৫ শতাধিক পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছে। যারা টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মিঠাপানির ছড়া এলাকার বাসিন্দা। এরা যুগের পর যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন টেকনাফ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গেম রিজার্ভ মৌজায়। সেখানে বসতি স্থাপন করে, বিভিন্ন বাগান ও ফলদ গাছ রোপণ করেছে। এসব বাগানের সুপারি, পান সহ উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। সম্প্রতি ওই বন বিভাগের জমিতে সরকার হেলিপেড, রাডার স্টেশনসহ একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। আর এটি বাস্তবায়ন করা হলে শতশত পরিবার বাস্ত্যুচুত হবে। উপার্জনক্ষম হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে। তাদের আশ্রয়, আয় রোজগার ও ঘরবাড়ি, রোপিত গাছ, বাগান হারানোর ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

এর প্রতিকার চেয়ে এলাকার লোকজন ১৭ জুলাই সোমবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। দরখাস্তে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রশিদ মিয়া, এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি সদস্য আহমেদ হোসেনসহ শতাধিক লোকজন স্বাক্ষর করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ” আবেদনকারীগণ টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডের মিঠাপানিরছড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। আমরা যুগ যুগ ধরে বংশ পরিক্রমায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের টেকনাফ রিজার্ভ মৌজার জমিতে বসবাস করে আসছি। এই সমস্ত জমিতে বসতি স্থাপন ও শতশত প্রজাতির গাছপালা রোপণ করে বাগান করেছি। পাশাপাশি পরিবেশ, প্রকৃতি, পাহাড়, বন সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছি। সৃজিত সুপারি বাগান ও বিভিন্ন ফলদ বাগান থেকে উৎপাদিত ফসলাদি বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। এই জমিতে গ্রামীণ রাস্তাঘাট মসজিদ-মক্তব ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যক্রমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান তাতেই সুখে-শান্তিতে আমরা বসবাস করে আসছি।

“দরখাস্তে আরো উল্লেখ করা হয়, “আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ঠিকানায় সরকারি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। হেলি পেড, রাডার স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনার জন্য প্রায় ১০০ (এক শত) একর টেকনাফ সংরক্ষিত বনাঞ্চল (গেম রিজার্ভ বন এলাকা) অধিগ্রহণ করার জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে প্রকল্পটি স্থাপিত হলে ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠিত পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে উপার্জনের পথ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়বে। অথচ, প্রস্তাবিত মিঠাপানিরছড়া এলাকার জমির সামান্য দক্ষিণ ও উত্তর এলাকায় বিশাল বিশাল খাস জমি/বন বিভাগের জমিতে উল্লেখযোগ্য কোনো বসতি নাই। সেখানে সরকারের প্রয়োজনীয় স্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে আমাদের বসত বাড়ি ও সৃজিত বাগান রক্ষা পাবে। অন্যথায় শতশত পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন, ভূমিহীন ও কর্মহীন হয়ে চরম আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও দূর্ভোগে পড়বে।”

দরখাস্তের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম । তিনি জানান, ” ৫ শতাধিক পরিবার বন বিভাগের জমিতে যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাসরত রয়েছেন। তারা সুপারি বাগান, পানের বরজ ও বিভিন্ন জলজ গাছ লাগিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। “তাদের আশ্রয়, উপার্জন, পরিবেশ ও সমূহ আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির নিরসন বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, “এ বিষয়ে জনস্বার্থে সদয় বিবেচনা পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন জরুরি।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ” এলাকায় বসবাসকারী লোকজন কর্তৃক দেওয়া দরখাস্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। “

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্ক, উচ্ছেদ, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন