সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে ৫ শতাধিক মানুষ

fec-image

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র ভয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ সদরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সর্তকতা সংকেত জারি হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে টেকনাফে চলে এসেছে পাঁচ শতাধিক মানুষ। আমি নিজেও টেকনাফে অবস্থান করছি।

তিনি বলেন, সার্ভিস বোট, ফিশিং বোটসহ বিভিন্ন নৌ-যানের করে দ্বীপের বাসিন্দারা নিরাপদে চলে এসেছে। আগামীকাল শুক্রবার দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিবে।

ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার হাবিব খান বলেন, হক পরিবার, ইউরো বাংলা রেস্টুরেন্টের মালিক পক্ষ ও কাঁচামাছ ব্যবসায়ী মাহবুবসহ ১৫টি পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সেই পরিস্থিতি এখনও হয়নি। তবে দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকতে প্রত্যেক গ্রামে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রসহ হোটেলগুলোর পাশাপাশি দ্বীপে সিপিপির ১৩০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বীপের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই প্রবাল দ্বীপসহ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদের তীরে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, দুর্যোগে স্থানীয়দের জন্য উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিশেষ জোন হিসেবে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপের জন্য নৌবাহিনীসহ বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, মেডিক্যাল টিমসহ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, ‘সাগরের বুকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বীপের জন্য আমাদের নৌবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দ্বীপে বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে হোটেল-মোটেলসহ অর্ধশতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হটলাইন খোলা হয়েছে। বিশেষ করে দুই দ্বীপের (সেন্টমার্টিন ও শাহপরী) বাসিন্দাদের সচেতনতার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আগে থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সংস্থার আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হবে। বিশেষ করে দ্বীপের লোকজন যাতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা, স্কুল, আবহাওয়া অফিস, ডাকঘর, হোটেলগুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছে।’

এদিকে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে। এর ফলে বৃহস্পতিবার (১১ মে) আবহাওয়া অধিদফতর থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা নামিয়ে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়েছে।

এদিকে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন।

বিশেষ করে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্বেচ্ছাসেবক, কর্মীবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। কমিউনিটি রেডিও সৈকত ২৪ ঘন্টা আবহাওয়া সতর্কতা সংকেত প্রচার করছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্ক, ঘূর্ণিঝড়, মানুষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন