তুমব্রু সীমান্তে আধঘণ্টায় ২০ গোলার আঘাত, বাড়ছে আতঙ্ক

fec-image

নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাত্রাতিরিক্ত গোলাবর্ষণ ও এর শব্দে বান্দরবান সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার পর থেকেই মর্টারশেল ও গোলাবর্ষণের পরিমাণ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তুমব্রু সীমান্তে বিস্ফোরিত হয়েছে কমপক্ষে ২০টি গোলা।

মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষজনও। সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বলে দাবি সীমান্তবাসীদের।

তুমব্রু সীমান্ত ঘেঁষে বসবাসকারী বাংলাদেশি সুমিতা রায় বলেন, এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু মনের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক কাজ করছে। মর্টারশেল উড়ে এসে পড়লে স্বামী-সন্তান পরিবারের মানুষের কী হবে। কোনারপাড়ায় মর্টারশেল বিস্ফোরণের পর থেকেই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছি না। কিন্তু ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো স্থান নেই। প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বসবাসকারী ৩শ পরিবারের জন্য জায়গা ঠিক করে জানাবে বলেছেন। তারা যেখানে বলবে ওখানেই চলে যাব নিরাপত্তার স্বার্থে। ঘরবাড়ির চেয়ে স্বামী-সন্তানদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তুমব্রু এলাকাটি ২ ভাগে বিভক্ত করায় সীমান্ত ঘেঁষে মানুষের বসতি পড়ে গেছে। সীমান্তের এপারে-ওপারে উভয় ভূখণ্ডেই তুমব্রু এলাকা রয়েছে। তুমব্রু সীমান্তের মিয়ানমার অংশে মূলত গোলাগুলি হচ্ছে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর। দুপক্ষের সংঘাতে মাঝে মধ্যেই মর্টারশেল গোলা এবং ভারি অস্ত্রের গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক মনে হলেও সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে গোলাগুলির শব্দ। তুমব্রু সীমান্তের এপার থেকেই ওপারে পাহাড়ে মর্টারশেল বিস্ফোরণের ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে। সীমান্ত থেকে ৩শ পরিবারকে সরানোর চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

স্থানীয়দের দাবি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু, আমতলী, ফাত্রাঝিরি, চাকমাপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয়দের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। বাড়ানো হয়েছে টহলও।

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি সীমান্তজুড়ে প্রশাসন, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন। কঠোর নিরাপত্তায় স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর থেকে এপাড়া থেকে অন্যপাড়ায় যেতে পারছেন না।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাবনাও ঊর্ধ্বতনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে করণীয় ঠিক করবেন। ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনা মোতাবেক সীমান্ত অঞ্চলের জনসাধারণে নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্ক, মিয়ানমার, সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন