অস্ত্র গুলি খুনের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় প্রয়োজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: বীর বাহাদুর
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন,‘অস্ত্র, গুলি ও খুনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে শান্তি ও সমস্যার সমাধান কখনো সম্ভব নয়। প্রয়োজন সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি ও পারস্পারিক বিশ্বাস।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী আরোও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ‘শান্তিচুক্তি’ করেছে, এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নও আওয়ামীলীগই করবে। শিক্ষা সকলের অধিকার উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ের মানুষকে শিক্ষিত করতে প্রয়োজনে ভিক্ষা করব।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি শুক্রবার দুপুরে পৌর টাউনহল মিলনায়তনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আয়োজিত গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ সরকার প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ মা-বাবারা অশিক্ষিত উল্লেখ করে তিনি শিক্ষকদের মা-বাবার ভূমিকাও পালন করার আহবান জানান। পাশাপাশি সন্তান ঠিক মতো বিদ্যালয়ে যাচ্ছে কিনা এ খোঁজ-খবরও রাখতে হবে অভিভাবকদের পরামর্শ দেন।
শিক্ষাখাতে আরও বরাদ্ধ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করে দেশ সেবায় আত্ননিয়োগ করতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক এ তিনজনের সমন্বয়ে একজন ছাত্র ভাল ফলাফল করতে পারে। শুধু এ+ পেলেই হবেনা জাতীয় মেধায় উত্তীর্ন হয়ে মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে।
পাহাড়ে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে বিদ্যুৎ দেয়া হবে, বিদ্যুৎ না থাকলে প্রয়োজনে সোলার দেয়া হবে। এরপরেও কাউকে পিছিয়ে থাকলে চলবেনা। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ সেবায় কাজ করার প্রতি তিনি আহবান জানান।
‘উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধী দল অযৌক্তিক দাবি নিয়ে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সরকার চলতি বছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য বিদেশে রফতানি করছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের চাহিদা অফুরন্ত, কিন্তু সম্পদ সীমিত। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এসবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথো অং মারমা‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিম ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো: এনায়েত হোসেন মান্নান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম, শিক্ষবিদ বোধীসত্ব দেওয়ান, অভিভাবাক ধীমান খীসা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রমেন্দ্র নাথ পোদ্দার ও কৃতি শিক্ষার্থী নুসরাত-ই-ইসলাম পুষ্পিতা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন ৩২০ জন ছাত্র/ছাত্রী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত ১৮৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে এককালীর শিক্ষা বৃত্তির অনুদান ও সনদ তুলে দেন। এ সময় মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রী নুসরাত-ই-ইসলাম পুষ্পিতা জেলা পর্যায়ে প্রথম এবং মন্ত্রীর উদ্দ্যেশে দেয়া বক্তৃতায় সাফল্য অর্জন করায় তাকে নগদ পাচঁ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নে ৭০জন প্রশিক্ষিত নারীর মাঝে ৭০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।
একই দিন বিকালে প্রতিমন্ত্রী খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কুমিল্লাটিলায় পৌরসভার উদ্যোগে নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন, বাজার পুকুরের সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন, জেলা আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।