পাহাড়ের পাদদেশে আখ চাষ

আখ চাষে অপার সম্ভাবনা দেখছেন কাপ্তাইয়ের আখ চাষীরা

fec-image

দেশের প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আখ। বিশেষ করে দেশে চিনি ও গুড় তৈরিতে আখের ভূমিকা অন্যতম। উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে আখের যথেষ্ট সুনামও রয়েছে। সেই উন্নত জাতের আখ চাষ করেই লাভবান হচ্ছেন রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার প্রান্তিক চাষীরা।

কাপ্তাইয়ের ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নস্থ বারঘোনা তনচংগ্যার পাড়ায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে একের পর এক আখের ক্ষেত। যেখানে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা আখগুলো নজর কাড়ছে পথচারীদের। এছাড়া বর্তমানে ওখানকার প্রায় প্রতিটি আখক্ষেতের আখগুলি বেশ পরিপক্ক হওয়ার ফলে দেখতেও বেশ ভালো লাগছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পাইকার ক্রেতারাও আখ ক্ষেতগুলো কিনে নিতে ছুটে যাচ্ছেন চাষীদের দ্বারে দ্বারে।

প্রায় ৪০ শতক জমিতে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত আখ চাষ করে আসছেন বারঘোনার স্থানীয় বাসিন্দা রাশিয়া তনচংগ্যা। তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আখ চাষ শুরু করেছেন তিনি। বিশেষ করে পূর্বে তাঁর পিতা ও দাদারাও একসময় এই আখ চাষে করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি প্রথমদিকে নিজস্ব অর্থায়নে বাজার থেকে ২ শত ৮ জাতের আখের চাষ শুরু করেন এবং তাতে খুব ভালো সফলতা পান। পরবর্তীতে গত অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রজেক্ট এর সহযোগীতায় আখের উন্নত জাত রঙবিলাশ এর চাষ শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রায় তাঁর ক্ষেতের আখগুলো যথেষ্ট পরিপক্ক হয়েছে। ইতিমধ্যে আখগুলো তোলা শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।প্রতিবছর আখ চাষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করলেও দ্বিগুন লাভবান হয়েছেন বলে জানান।

বারঘোনার স্থানীয় আরেকজন সফল চাষী মৃণাল তনচংগ্যা। তিনি অন্যান্য ফসল চাষ করলেও বর্তমানে আখ চাষে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরও প্রায় ৩৩ শতক জমিতে সরকারি সহযোগীতা এবং নিজস্ব চেষ্টায় তিনি আখ চাষ শুরু করে সফলতা পাচ্ছেন। বর্তমানে তাঁর ক্ষেতেরও আখগুলি প্রায় পরিপক্ক হওয়ায় অনেক আনন্দিত হয়েছেন তিনি। তাঁদের আখ চাষের সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক চাষীরাও আখ ক্ষেত করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তিনি জানান। তবে এলাকায় পানির সমস্যার বিষয়টি তিনি তুলে ধরে বলেন, যদি এই বারঘোনা তনচংগ্যা পাড়ায় পানির সমস্যা দূর করা যায় এবং স্থানীয় চাষীদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় তবে তারা সকলেই উপকৃত হবেন বলে জানান।

আখ ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান, আব্দুর রহিমসহ কয়েকজন ক্রেতা জানান, কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এসব আখের যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। এবং দেশের অনান্য অঞ্চল থেকে এখানে আখের দামও অনেক সাশ্রয়ী। অন্যদিকে কাপ্তাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হওয়ার ফলে প্রতিবছরই আমাদের মতো পাইকার ক্রেতারা এই আখ ব্যবসা করে বেশ লাভবান হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, আখ আমাদের অর্থকরী ফসল। একসময় দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য আখ চাষ কমে এসেছিলো কিন্তু বর্তমানে আখ চাষে সুদিন ফিরে এসেছে। অনেক চাষীই বর্তমানে আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পাশাপাশি আমরা কাপ্তাইয়ের আখ চাষীদের আখের ক্ষেতের মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে সরিষা বা অনান্য ফসল চাষাবাদে আগ্রহী করে আসছি।

এছাড়া সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ের আখ চাষীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এতে আখ চাষীরা অনেকটা উপকৃত হয়েছে। সর্বপরি বলা যায় যে, দেশে প্রয়োজনীয় চিনির চাহিদা মেটানোর জন্য আখ চাষের বিকল্প নেই। তাই কৃষকদের এই অর্থকরী ফসল আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন