আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতয়ারা খাগড়াছড়িবাসী

mango
এম. সাইফুর রহমান : মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে পাহাড়ের আমগাছগুলি। খাগড়াছড়ির পাহাড় জুড়ে শোভা পাচ্ছে চোখ জুড়ানো আমের বাগান। মুকুলের টুইটুম্বর গাছের ডাল ও পাতা ডেকে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আশা করা যায় এবার রসালো ফল আমের বাম্পার ফলন হবে পাহাড়ে।

তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ অঞ্চলে আম চাষ কিছুটা নতুন হলেও খাগড়াছড়ির আমের সুনাম এখন দেশজুড়ে। কখন জানি রাজশাহী’র আমকে ছাড়িয়ে যায় এ অঞ্চলের আমের উৎপাদন এ প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে সবার মনে। আমের যে কোন গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার পথে মুকুলের গন্ধে ভরে উঠছে মন। গাছে গাছে মুকুলের আধিক্য দেখে কৃষিবিদদের ধারণা আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার আমের উৎপাদন বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। আম চাষীদের আশাও বাম্পার ফলনের দিকে। অবশ্য ইতোমধ্যে আম ও লিচুর বাম্পার ফলন উকিঁ দিতে শুরু করেছে। গাছে ব্যাপক ভাবে মুকুল দেখে মোটা অংকের অর্থের আশায় গাছে গাছে কীটনাশক স্প্রে করছে কৃষকরা।

খাগড়াছড়ি’র রামগড় উপজেলার বড়পিলাক গ্রামের কৃষক নুর হোসেন ২০০৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ধান চাষ না হওয়া ৩ একর টিলাভূমিতে আম এবং মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলেন। গত বছর তিনি প্রায় ৩০০ মণ আম বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেন। নুর হোসেনের বাগান ঘুরে দেখা যায়, তার বাগানে আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলী, মালতি, গোপালভোগ, মল্লিকা, হিম সাগরসহ দেশী-বিদেশী প্রায় ৮/১০ প্রকারের আম গাছ রয়েছে।

আমচাষী নুর হোসেন জানান, পাহাড়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আমচাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একসময় কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই সনাতন পদ্ধতিতে আমচাষ করা হতো। এতে তেমন একটা সুফল পাওয়া যেতো না। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুইয়ার সহযোগীতায় উন্নত প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে চারা পাওয়ায় আমার বাগান সৃজন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে তার দেখাদেখি অনেকেই আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তিনি আরো জানান, এঅঞ্চলে আম চাষে শ্রম দিয়ে চিন্তায় ছিলাম শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারবো কিনা। পরবর্তীতে ২/৪ বছর পার হতে না হতেই এর সুফল সবার নজরে আসে। নুর হোসেন এখন একজন শতভাগ সফল আমচাষী। তবে তার বাগানের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি। পাহাড়ে যেকোন ফলজ বাগান চাষের জন্য প্রথমত পানির সমস্যাই প্রধান। পানির সমস্যা সমাধান করা গেলে আম চাষ একটি সম্ভাবনাময় কৃষি খাত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

পাহাড়ের একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানাযায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমচাষ এ অঞ্চলে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে আম চাষে অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে তারা পরিচিতি নয়। তাই আমের ফলর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম। পাহাড়ী অঞ্চলের উর্বর মাটিতে অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আমচাষ করা গেলে দেশের যেকোন অঞ্চলের তুলনায় ফলন আরো ভাল হবে বলেও তারা জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, ১৯৯৯ সালে ১২ কোটি ৮৮লক্ষ টাকা ব্যয়ে পূর্নবাসন কর্মসুচীর আওতায় রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির আট উপজেলায় মিশ্র ফল বাগান প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ কর্মসুচীর আওতায় ৪৫০টি পরিবারকে পূর্নবাসন করা হয়। তারমধ্যে ৯৯টি বাঙ্গালী ও ৩৫১টি উপজাতীয় পরিবার।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, পাহাড়ে আম চাষ বিপ্লবকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমচাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে এখন আমচাষ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আগামীতে এর পরিমাণ দ্বিগুণে পৌছাবে বলেও জানান তিনি।

গুইমারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন কর জানান, আম চাষে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। মাত্র ২/৩ বছর বয়স থেকে আমের ফলন শুরু হয় এবং দীর্ঘসময় পর্যন্ত টানা ফলন পাওয়া যায়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও প্রাকৃতিক দূযোর্গ না হলে আমের আশানুরূপ ফলন হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন