জিম্মি অসহায় পরিবার

উখিয়ায় সন্ত্রাসী ও দখলবাজচক্র কারামুক্ত হয়েই বাদীদের মেরে ফেলার হুমকি!

fec-image

উখিয়া জালিয়াপালং মোহাম্মদ শফির বিল এলাকায় সন্ত্রাসী ও দখলবাজচক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে অসহায় একটি পরিবার। তারা ভয়ে ঘরে থাকতে পারছে না। স্কুল পড়ুয়া ছেলেসহ সন্তানদের নিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। থানায় গিয়েও প্রতিকার পাননি। উল্টো পুলিশের আশকারায় বেপরোয়া দখলবাজরা।

জীবনের নিরাপত্তা ও আইনের হস্তক্ষেপ চেয়ে শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন ভুক্তভোগী বনি আলম।

তিনি উখিয়ার মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে। বনি আলম বলেন, ইনানী রয়েল টিউলিপের পাশে মেরিন ড্রাইভের কাছে আমার একখণ্ড জমি আছে। সেখানে আমার দোকান/রেস্টুরেন্ট, বাড়ি, পুকুর ইত্যাদি রয়েছে। সেগুলোতে নজর পড়ে চিহ্নিত দখলবাজচক্রের। চক্রটি গত ২ নভেম্বর আমার বাড়ি এবং দোকানে ডাকাতি করে। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি ও পরিবারের লোকজনদের কোপায়। গুলিবিদ্ধ হয় আমার স্ত্রী ফরিদা, শাহিনা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস রিফা, মেয়েসহ বাড়ির সবাই। পাড়া প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। নির্মমতা এমন ছিল যে, বাড়িতে থাকা আমার এক বছরের শিশু নাতি আবাবিল পর্যন্ত রেহাই পায়নি।

ঘটনাকালে বাড়ি থেকে ১০০ থেকে ২০০ গজ দূরত্বে পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দিই। থানায় ফোন দিই। ৯৯৯ এ ফোন দিই। যথাসময়ে কেউ আসেনি। ইতোমধ্যে ডাকাতরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা দিতে ব্যর্থ হয়ে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হই। শুনানি শেষে মামলা রেকর্ড করতে থানাকে আদেশ দেন বিচারক।

গত ৬ নভেম্বর মামলাটি অফিসার ইনচার্জ উখিয়ার টেবিলে যাওয়ার পর রেকর্ড না করে ফেলে রাখেন। উল্টো প্রধান অভিযুক্ত মোহাম্মদ তৈয়বকে ডেকে নিয়ে যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে গত ৮ নভেম্বর মামলা নেন। পরবর্তীতে আমার মামলাটিও রেকর্ড করেন। আমার মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ তৈয়ব জালিয়াপালং মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, কাদির হোসেনের ছেলে আমিন প্রকাশ বর্মাইয়া আমিন, জুম্মা পাড়ার মৃত জালাল আহমেদের ছেলে শাহজাহান, পাটুয়ারটেকের মৃত জাফর আলমের ছেলে আবু সিদ্দিক, মৃত জালাল আহমদের ছেলে আমান উল্লাহ, মোহাম্মদ শফির বিলের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে কাশেম, রানা, আব্দুল করিমের ছেলে রুবেল, সোহেল, আব্দুস সালামের ছেলে হারুন, চোয়াংখালীর বদি আলমের ছেলে মোজাম্মেল হক।

বনি আলমের অভিযোগ, আমার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাউসার হামিদ। তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর ছুটিতে পাঠিয়ে দিলেন, যাতে আসামিদের কোন ক্ষতি না হয়। ইতোমধ্যে আমরা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আসামিরা আমার বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, দোকান, পুকুরের অস্তিত্ব পর্যন্ত রাখেনি। অন্যদিকে র‍্যাব সদস্যরা তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় দিলে, থানা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে চালান দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য! একজন আসামি মোজাম্মেল নিজেকে মেম্বার পরিচয় দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জামিনে বেরিয়ে যান। অথচ সে এখন মেম্বারও না, তার ওয়ার্ডে বর্তমানে মেম্বার জাহিদ আলম। আসামি কোন এককালে মেম্বার ছিলেন, সেই কাগজপত্র জাল করে চেয়ারম্যানের জাল প্রত্যয়নপত্র দিয়ে জামিন নেন। অর্থাৎ ভিকটিমের শরীর থেকে গুলি বের হওয়ায় আগেই আসামি জেল থেকে বেরিয়ে গেছে।

অপর দুইজন আসামি তৈয়ব এবং বার্মাইয়া আমিনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ডাকাতির কারণে অস্ত্র উদ্ধার, ডাকাতির রহস্য ও অন্যান্য আসামির নাম ঠিকানাসহ নানাবিধ কারণে আসামিদের ৭ দিন রিমান্ডের আবেদন করে গত ২১ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করলে সেটা মূল নথির সাথে শামিল না করে রহস্যজনকভাবে উপনথিতে রেখেছেন। ইতোমধ্যে গত ২২ নভেম্বরে দুই কুখ্যাত আসামি তৈয়ব ও আমিনের জন্য বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ফৌজদারী মিচ-৮০৩৮/২০২২ নং মূলে জামিনের আবদেন করলে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত রিমান্ড আবেদন নিষ্পত্তি করে নিম্ন আদালতের নথি প্রেরণের আদেশ দিলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন নিম্ন আদালতের নজরে না এনে এবং রিমান্ডের আবেদন মূল নথিতে না দিয়ে উপনথি খুলে আলাদা করে রেখে দিয়ে মূল নথি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যাতে রিমান্ডের আবেদন জেলা জজের কাছে না যায় বা চোখে না পড়ে। অথচ যেই কাগজেই আসুক সেটি নথিতে যাওয়ার কথা, ২১ তারিখের আবেদন ২৩ তারিখ পর্যন্ত নথিতে না যাওয়া থেকে বুঝা যায় আসামিরা কতটা শক্তিশালী। ইতোমধ্যে জামিনে যাওয়া আসামি প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে ঘটনাস্থলে।

আসামিরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে যে, তারা আমার বসত ভিটায় ডাকাতি করেছে। এই জায়গা দখল করে বিক্রি করে দিবেন।

আমরা অসহায়। আইনী সহযোগিতা না পেলে বঙ্গোপসাগরে ঝাপ দেওয়া ছাড়া আর কোন গ্রন্তব্য থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বনি আলমের স্ত্রী ফরিদা বেগম, মেয়ে শাহেনা আকতার, জান্নাতুল ফেরদৌস রিপা, ছেলে মহি উদ্দিন, জামাতা জাফর উল্লাহ, কাউছার ও রাসেল উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, দখলবাজ, বাদী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন