উত্তপ্ত মিয়ানমার: সীমান্তবর্তী পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের বিদ্রোহী গোষ্ঠির আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মাঝে এখনো তুমুলভাবে গোলাগুলি হচ্ছে। ঘুমধুম সীমান্তের ঘেঁষা মিয়ানমারে ডেকবুনিয়া ক্যাম্প দখলে নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠির আরাকান আর্মি। যার কারণে দুই দলের মাঝে এখনো ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। দফায় দফায় আকাশ পথ থেকে ছোঁড়া হচ্ছে গুলি। সে ক্যাম্পে কিছুক্ষণ ধরে জ্বলছে আগুন।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সীমান্তের দু’পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটেছে। তুমব্রু সীমান্তে ঘেষা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র রাইট ক্যাম্প দখলে নিয়ে পতাকা উড়ছে। কিন্তু সকাল থেকে এখনো থেমে থেমে গুলিবর্ষণ হচ্ছে। যার কারণের সীমান্তের বসবাসরত স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছাড়ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সীমান্তের উত্তেজনার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিবেচনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়র।

সোমবার (৫ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আক্তারুন্নাহার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সীমান্তবর্তী বিদ্যালয় হল- বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, সীমান্তের পরিস্থিতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। যার ফলে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র স্থানে আশ্রয় নিয়েছে শিক্ষার্থীরসহ পরিবার পরিজনেরা। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি অবনতির না হওয়ার পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সেই সাথে সীমান্তবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

এদিকে আজ বিকালে দুপুর আড়াইটার দিকে বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমে সীমান্তের মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে এসে পড়েছে। সে ছোড়া মর্টারশেল ঘুমধুমে ৪নং ওয়ার্ডের জলপাইতলী এলাকায় ঘরের ভিতর ঢুকে বিস্ফোরিত হয়। এসময় ঘটনাস্থলে বাংলাদেশে নাগরিক হোসনেয়ারা (৪৫), ক্যাম্প ৯নং রোহিঙ্গা নাগরিক নবী হোসেন(৫৫) নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হয়েছে নুসরাত মনি ৭ বছর বয়সের নামে একশিশু। এই ঘটনাটির পর সীমান্তেবর্তী এলাকার জুড়ে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। শুধু তাই সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষদের সর্তকভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

কক্সবাজার র‍্যাব ১৫ উপ-অধিনায়ক আবু সালাম চৌধুরী বলেন, বিগত কয়েকদিন ধরে সীমান্তেবর্তী এলাকার উত্তেজনা শুরু হয়েছে সেটি এখনো চলমান রয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্ডার গার্ড বিজিবি,র‍্যাব,পুলিশ যে যার ক্ষেত্র থেকে দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আর সীমান্তে ঘেঁষে যেসব পরিবার আছে তারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্র স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এবং সবাইকে ঝুকিপূর্ণ ভাবে না থেকে নিরাপদের থাকার অনুরোধ জানান। পাশপাশি সীমান্তের জোরদার করার জন্য,বিজিবি,র‍্যাব পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো আরো জোড়দার করার চেষ্টার করে যাচ্ছি।

একইভাবে গতকাল রবিবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে এপারে বাংলাদেশে প্রদীর চন্দ্র ধরসহ দুইব্যক্তি আহত হয়েছে। ঘটনাটি সীমান্তবর্তী রক্ষাকারী মিয়ানমার বাহিনী বিজিপির ১৯ জন প্রাণ রক্ষার্থের ভয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ আশ্রয় নেয়। আজ সকাল পর্যন্ত মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর ৯৫ জন সদস্য ও সন্ধায় সাতটায় আবারও ঢেকিবনিয়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসছে মিয়ানমার বিজিপির ৭ সৈনিক। মিয়ানমারের থাকে পালিয়ে আসা এই পর্যন্ত বিজিপির সংখ্যা দাড়ালো ১০২ জন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় রেখে খাবার দিচ্ছে প্রশাসন।

এ ব্যাপারে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, বিদ্রোহী গোষ্ঠিকে যখন সীমান্তবর্তী মিয়ানমার বিজিপির যুদ্ধে পেরে উঠতে পারছিল নাহ তখন তারা জীবন বাচানোর জন্য বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাই। সেসব বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাক জানিয়ে মিয়ানমারের বিজিপির বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্যে যে কয়েকজন আহত রয়েছে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আদেশনুযায়ী খাবার দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম বলেন, আজ দুপুরে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে দুইজন নিহত হয়েছে সেটি খুবই দুঃখের বিষয়। এবিষয়ে মিয়ানমারের সরকার কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ডিপারটেশন ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সাথে বাংলাদেশে কোন রোহিঙ্গা বা বিছিন্নতাবাদী দল যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বর্ডার গার্ড বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন