এসএসসি ফেল ডেন্টাল চিকিৎসক!

fec-image

ডেন্টাল চিকিৎসার ওপর কোন ধরণের ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ নেই। একাডেমিক সনদও নেই। কোন মতে ৯ম শ্রেণির গণ্ডি পার করেছেন। এখন ডেন্টাল চিকিৎসক! নাম তার রূপন দে (৩০)।

কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়কে চেম্বার করেন। দীর্ঘদিন ধরে দন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে তাকে ‘দন্ত চিকিৎসক’ হিসেবেই চেনেন।

রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার ঘটনা। জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন। যন্ত্রণা নিরসনে একজন ভাল দন্ত চিকিৎসক খুঁজছেন। গেলেন কক্সবাজার হাসপাতাল রোডে। খানেকাহ মসজিদের পূর্ব দিকের মার্কেটের দক্ষিণে একটি সাইনবোর্ড তার চোখ পড়েছে। লাল রঙের সাইনবোর্ডটিতে আবদুর রহিম নামের একজন দন্ত চিকিৎসকের নামও শোভা পাচ্ছে। এরপর ওই চেম্বারে যান জাহাঙ্গীর আলম।

জানতে চান, চিকিৎসক আছে কিনা? রিসিপশন থেকে বলা হয়, আবদুর রহিম স্যার আছেন। যিনি বিডিএস ডিগ্রিধারী। ভালো চিকিৎসা দেন।

কি আর করার? বিশ্বাস করলেন দাঁতের যন্ত্রণায় কাতর জাহাঙ্গীর। তারপর চেম্বারে ঢুকলেন। সব সমস্যা বর্ণণা দিলেন। শুনলেন একজন। প্রেসক্রিপশনও লিখলেন। দাঁতের একটি এক্স-রেও করালেন। কিছুক্ষণ পরে রিপোর্ট হাতে আসে। সাড়ে ৯ হাজার টাকা দিলে ‘মুশকিল আছান’ ফর্মূলা দিলেন ডাক্তার মশাই। কোন উপায় নেই। টাকার চেয়ে দাঁত বড়। অসহ্য ব্যথা। দ্রুত উপশম দরকার। গ্যারান্টিযুক্ত চিকিৎসার আশ্বাসে একমত হলেন রোগি জাহাঙ্গীর আলম।

চিকিৎসা শুরু। সীটে শোয়ানো হলো তাকে। একটি ইনজেকশন পুশ করলেন ‘ডাক্তার’ সাহেব। মুহুর্তেই মরণ যন্ত্রণা অনুভব। ‘ডাক্তার’ মসাই বললেন ‘এনেসথেছিয়া’ দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ‘মতিগতি’ ভাল না। চিকিৎসার ধরণ দেখে সন্দেহ হয় জাহাঙ্গীরের। সীট থেকে ওঠে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, নাম কি? বললেন, রূপন দে।

রোগি জাহাঙ্গীর জানতেন না- যিনি এক্স-রে করালেন; এতক্ষণ চিকিৎসা দিলেন তিনি আসলেই ডাক্তার আবদুর রহিম নন। আরো আশ্ে র‌্যে্যর ব্যাপার হলো- রূপন দে যে প্যাডে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, তাতে কোন ঠিকানা নেই। বিডিএস ডিগ্রিধারী আবদুর রহীমের একটি সীলও মেরেছেন। নেই কোন স্বাক্ষরও।

এদিকে রোগিদের সঙ্গে অভিনব কায়দায় প্রতারণার খবর পেয়ে চেম্বারে যান পার্বত্যনিউজের এই প্রতিবেদক। ভুক্তভোগির মুখ থেকে সব শুনলেন। ডাক্তার পরিচয়দানকারী রূপন দেকে পড়ালেখা কতদূর করেছেন জিজ্ঞেস করা হলে,  তার জবাবে বলেন, মহেশখালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে এসএসটি দিয়েছিলেন। কিন্তু ফেল করেছেন। আর পড়া হয়নি। বিডিএস বিষয়ে কোন ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণও নেই। রূপন দের ভাষ্য মতে, তার বাবার নাম নিরঞ্জন দে। বাড়ি মহেশখালী পুটিবিলা।

দোকানটির উপরে এক সময় ‘কক্স ডেন্টাল’ লিখা সাইনবোর্ড ছিল। সম্প্রতি ওই সাইনবোর্ডটি উধাও হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এ জন্য তিনি উপযুক্ত তথ্যও চেয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন