কক্সবাজারে এবার স্কুলছাত্রীকে হোটেলে দুদিন আটকে রেখে ধর্ষণ 

fec-image

অষ্টম শ্রেণির স্থানীয় এক ছাত্রীকে গত ১৩ ডিসেম্বর তুলে নিয়ে দুদিন কক্সবাজার শহরে কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের একটি হোটেলে আটকে রেখে ধর্ষণ করে এক বখাটে যুবক। গত ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হলেও গতকাল পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে, ওরা পলাতক।

কক্সবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। আসামিরা হলেন-কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক (২৭) ও তার মা রাজিয়া বেগম (৫৫), বাবা নজরুল ইসলাম (৬০), ভাই মো. কামরুল (৩৪) এবং শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার মো. হায়দার ওরফে হায়দার মেম্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৪০)। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী (১৪) কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই স্কুলছাত্রী এক প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত আশিকসহ ৩-৪ জন যুবক জোর করে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে মমস্ গেস্ট হাউজে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত যুবক আশিকের স্বজনদের দাবি, ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে আশিকের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকের পরিবার সামাজিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাতে রাজি ছিল না।

তবে ছাত্রীর অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে সে স্কুলে ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়ার পথে আশিক প্রেম নিবেদন ও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় আশিক ও তার সহযোগীরা মিলে তাকে উত্ত্যক্ত করত। ব্যাপারটি আশিকের বাবা-মাকেও জানানো হয়েছে। মেয়েটি বলেছে, দুদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করার পর গত ১৫ ডিসেম্বর রাত ৮টায় আশিক ওই হোটেল থেকে বের হয়ে গাড়িতে তুলে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে কৌশলে সটকে পড়ে। পরে বাবা-মা তাকে উদ্ধার করে।

মেয়েটির বাবা বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়। তাকে না পেয়ে নানা স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। ঘটনার দুদিন পর গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয়রা আমার মেয়েকে আশিকের বাড়ির সামনে দেখতে পেয়ে খবর দেয়। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসি। তিনি বলেন, তারা (আশিকের বাবা-মা) উলটো আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে মামলা করলে বা আইনের আশ্রয় নিলে আমার মেয়েকে পুনরায় অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলবে। এরপর কোনো উপায় না দেখে আমার মেয়েকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করি।’

তিনি বলেন, পরে গত ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. আশিকসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামিরা এখনো নানাভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। গত দুদিন আগে অভিযুক্ত কামরুল আমার ঘরে এসে হুমকি দিয়ে যায়। এ সময় মামলা প্রত্যাহার না করলে পরিবারের সদস্যদের চোখ উপড়ে ফেলারও হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগ করা হয়েছে।’

আশিকের মা ও মামলার ২ নম্বর আসামি রাজিয়া বেগমের মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করেন তার পুত্রবধূ শাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, আশিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। শাহেনা বলেন, তার দেবর আশিক ও ওই স্কুলছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। মেয়েটিকে বউ করে আনতে তারা (শাহেনা) রাজি। কিন্তু এতে মেয়ের পরিবার রাজি নয়।

এক সপ্তাহ পরও কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম বলেন, মামলার তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামি গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন