৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ

কক্সবাজারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা

fec-image

চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মালিকানাধীন জমি দখলের অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। চিহ্নিত দখলবাজচক্র ও সন্ত্রাসীরা দাবি করেছে ৪০ লাখ টাকা। অন্যথায় হুমকি দিচ্ছে প্রাণনাশের। এখন অপরাধীদের কাছে জিম্মি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে বের হতে পারছে না। চলাফেরাতে হামলার ভয়। মেরে ফেলার হুমকি পাঠাচ্ছে দাগি অপরাধীরা। পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের চায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হাসান ফারুক।

তিনি চকরিয়ার খুটাখালী ৮নং ওয়ার্ডের ফুলছড়ি মাদরাসা পাড়ার বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চকরিয়া উপজেলার সাবেক কমান্ডার মরহুম আলহাজ্ব ফরিদ আহমদের ছেলে। পেশায় একজন ব্যাংকার। হাসান ফারুক বলেন, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ফরিদ আহমদ মারা যান। পিতার সম্পদের অংশীদার হিসেবে বিএস খতিয়ান নং-৫০০, ৫০১, ৫৬৭, ৩৫৯, ৪২৯, ৪৬৪/১, ৩৯৮, ৪০০, ৪০১, ৪০২, ৪০৩, ৪৫২ এই ১১টি খতিয়ানের প্রায় ২০ একর জায়গা ভোগ দখলীয় মালিক আমরা। আমাদের পক্ষে সম্পদের দেখভাল করেন চাচা জাফর আহমদ।

সম্প্রতি খতিয়ানভুক্ত জমি জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে ১৫/২০ জনের সন্ত্রাসী-দখলবাজচক্র। একসময়ের বিএনপির ক্যাডার বর্তমান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দীন এই দখলবাজিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের।

অভিযুক্ত জসিম উদ্দীন খুটাখালী ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আলী হোছনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা রয়েছে।

ইতোমধ্যে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদের ছোট ভাই জাফর আহমদ। এ মামলায় বারিত আদেশসহ ১৪৪ ধারা জারি করেন আদালত। আদালতের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে চিহ্নিত দখলবাজচক্র।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ মতে অভিযুক্ত জসিম উদ্দীন গংকে ২২ মার্চের আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। তাতেও পাত্তা দিচ্ছে না দখলবাজরা। উল্টো বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলহাজ্ব ফরিদ আহমদের নাম ধরে দখলবাজরা অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। আলোচনায় বসতে বললে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এমন একটি অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাত সংরক্ষিত। আরেকটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদের পরিবারের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বক্তব্য রাখেন।
তিনি আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহারকারী ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে থাকার ঘোষণা দেন। এসময় মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদের স্ত্রী হাসিনা বেগম, ভাবি ছেনুয়ারা বেগম, বোন রবি খাতুন, ভাতিজা মাইনুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম মানিকসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তবে, অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন জসিম উদ্দীন। তার দাবি, তিনি কারো জমি দখল করেন নি। হুমকি-ধমকিও দেন নি। সব মিথ্যা, অপপ্রচার।

এদিকে, নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোহাম্মদ হাসান ফারুক। এতে জসিম উদ্দিন, তার ভাই গিয়াস উদ্দিন, শিয়া পাড়ার মোহাম্মদ কালুর ছেলে মুজিবুর রহমান, ৩নং ওয়ার্ডের বাক্কুম পাড়ার আবুল বশরের ছেলে আব্দুল্লাহ ও ৫নং ওয়ার্ডের পূর্ব পাড়ার আবদুস সোবহানের ছেলে জহিরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করেছেন।

এদিকে, এমআর মামলার আলোকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মশিউর রহমান। তাতে, “বিবাদীগণ কোন কাগজপত্র দাখিল করেন নি”, “ব্যক্তিগত জমি বাদির ভোগ দখলে আছে এবং বিবাদীগণ দখলের চেষ্টা করেন”, “শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা আছে” মর্মে উল্লেখ আছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, জমি, মুক্তিযোদ্ধা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন