কক্সবাজারে স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৪তম জন্মদিন উদযাপন

vivekananda5

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে বিবেকানন্দ বিদ্যা নিকেতনের উদ্যোগে বিদ্যা নিকেতন প্রাঙ্গণে বিশ্ববিখ্যাত মনীষী ও প্রাচ্যের নবজাগরণের পুরোধা বিশ্ববিবেক স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৪তম জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিবেকানন্দ বিদ্যা নিকেতনের পরিচালক অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ দাশ এবং বিদ্যা নিকেতনের সহকারী শিক্ষক মো. ওমর ফারুক-এর উপস্থাপনায় “স্বামী বিবেকানন্দ ও মানবতাবাদ” শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিবেকানন্দ বিদ্যা নিকেতন ও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, কক্সবাজারের সভাপতি অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন, বিদ্যা নিকেতনের সহকারী শিক্ষক মো. ওমর ফারুক ও বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন শ্রীমৎ স্বামী কৃপারূপানন্দ ও স্বামী দেবধ্যানানন্দ।

বিদ্যা নিকেতনের পরিচালক অধ্যাপক গোপাল কৃষ্ণ দাশের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। এরপর বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষিকা মহুয়া দাশের পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে যৌথ সংগীত পরিবেশিত হয়। বক্তব্য রাখেন বিদ্যা নিকেতনের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিজিৎ দাশ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পিতা পাল, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম কক্সবাজারের সহ-সভাপতি শ্রী দিলীপ দাশ, সাধারণ সম্পাদক শ্রী দুলাল চক্রবর্তী, সদস্য শ্রী মানস দাশ গুপ্ত এবং বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক শ্রী নির্মল চন্দ্র দে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার কক্সবাজার। তিনি বলেন, কেউ মানুষ হত্যা করে ইসলাম ধর্ম কায়েম করতে চাইলে সে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। এমনকি অন্য কোনো ধর্মেরও অনুসারী হতে পারে না। সকল ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় একটি, সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ করা।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী শক্তিনাথানন্দজী মহারাজ। তিনি বলেন প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে প্রথম হওয়ার চেষ্টা অপেক্ষা স্ব-শিক্ষা ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টাই উত্তম। তিনি আরো বলেন, তোমার কাজ তুমি করে যাও, তোমার খাবার তিনিই (সৃষ্টিকর্তাই) যোগাবেন। এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে যেসব মহামানব পাঠিয়েছেন তারা ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে মানব সেবায় ব্রতী ছিলেন। তাদের মধ্যে বিবেকানন্দ একজন। তাঁর নির্দেশিত পথ আমাদের চলার পথের পাথেয়। তিনি বিশ্ববাসীকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন পৃথিবীর কোন ধর্মই নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা ও অপসংস্কৃতিকে স্থান দেননি। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অপসংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এর অধ্যক্ষ শ্রীমৎস্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ। তাঁর বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল পৃথিবীর সকল মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। পৃথিবীর সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা। তিনি তাঁর বক্তৃতায় আরো বলেন নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা এবং অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকাই প্রকৃত ধার্মিকের লক্ষণ। এক সময় এই ভারতীয় উপমহাদেশ সংকীর্ণতা, অত্যাচার ও ধর্মীয় গোড়ামিতে পদপিষ্ঠ হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। তারই দেখানো মসৃণ পথে আমরা এগিয়ে চলেছি। তিনি বলেছেন যাবতীয় অন্যায়, অপসংস্কৃতি ও অপরাধের মূলে রয়েছে অশিক্ষা-কুশিক্ষা। তাই শিশুমনের সুকুমার বৃত্তি জাগ্রত করার মানসে, শিশু-কিশোরদের পড়ালেখায় মনোনিবেশের প্রতি উৎসাহিত করা মা-বাবার একান্ত কর্তব্য। যার যার ধর্ম মতের ধর্মীয় অনুশাসন শিশুদের শিক্ষা দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন পরিবার থেকে ভাল মানুষ গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, সবাই মিলে একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। পরিশেষে ২০১৫ সালে বিদ্যা নিকেতনের পি.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮৯ জন শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয় এবং “স্বামী বিবেকানন্দ ও বিশ্বমানবতা” শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, যে স্বপ্ন ঘুমের ঘোরে দেখা হয়, সে স্বপ্ন স্বপ্ন নয়। যে স্বপ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত উজ্জ্বীবিত করে সৎ পথে চলতে সেটিই প্রকৃত স্বপ্ন। পরে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পূর্বক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন