কক্সবাজার জেলায় ভূমিধসে ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০টি স্থান শনাক্ত

fec-image

কক্সবাজার জেলায় ভূমিধসে ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০টি স্থান শনাক্ত করা হয়েছে। উচ্চ রেজোলিউশন উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণ করে এই অঞ্চলসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর স্থানীয় জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ, রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ভূমিধসের উচ্চ ঝুঁকিতে বাস করেন।

বর্তমানে বিদ্যমান ভূমিধসের সতর্কবার্তা কেবলমাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে পৌছায়। ফলে প্রস্তুতির জন্য সময়ের অভাবে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে নতুন ব্যবস্থাটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা ই-মেইল এবং মোবাইল বার্তার মাধ্যমে পাঁচ দিন আগে অবহিত করা সম্ভব হবে। একটি বেসরকারি গবেষণায় এ তথ্য ওঠে এসেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায়, কক্সবাজারের জন্য একটি নতুন ভূমিধস পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করছে, যা বৃষ্টিপাতের মাত্রা এবং পূর্বাভাস, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের স্যাটেলাইট চিত্র ও অন্যান্য আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহার করে ঝুঁকি পূর্বানুমান করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা দিবে।

গবেষণা সূত্র মতে-টেকনাফ, উখিয়া, রামু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। চকরিয়া, কক্সবাজার সদর ও মহেশখালীর কিছু এলাকাও চিহ্নিত। তবে, পেকুয়াকে ’ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।

২০০৩ সাল থেকে কক্সবাজার জেলায় ভূমিধস দেখা দেয়। রোহিঙ্গাদের অবাধ বসতির কারণে ভূমিধসের ঘটনাসমূহ বাড়ছে। ২০১৭ সালের পরে বেড়েছে ভূমিধ্বস ঝুঁকি। যা ম্যাপিংয়ে কাজ করেছে সার্ভে টিম। তাদের মতে, সামগ্রিকভাবে পাহাড় ভূমিধস, দুর্যোগপ্রবণ অবস্থায় কক্সবাজারবাসীর বসবাস। গত বছরের সেপ্টেম্বর অক্টোবরে একটি দল সার্ভে করেছে। কক্সবাজার জেলায় কম, মাঝারি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০ পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে।

বাংলাদেশের জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে একটি উদ্ভাবনী ভূমিকম্পের পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে। যে সুবাদে আগামবার্তা জানবে জনগণ।

ভূমিধসের ফলে প্রাণহানি, আঘাত এবং সম্পত্তি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব, বন উজাড় এবং অপরিকল্পিত জমির ব্যবহারের কারণে ভূমিধসের সংখ্যা, তীব্রতা, এবং এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রায় প্রভাব রাখে। বাংলাদেশে সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে বর্ষাকালে মে থেকে সেপ্টেম্বর মধ্যবর্তী সময়ে ভূমিধস হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি, রবার্ট ডি সিম্পসন বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়াতে এফএও বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি এই নতুন ভূমিধ্বস পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যা মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়তা করবে।”

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর সহযোগিতায় সতর্কীকরণ ব্যবস্থাটি এফএও তৈরি করছে। এতে আথিক সহায়তা দিয়েছে ইউএসএইড এর মানবিক সহায়তা ব্যুরো।

পরবর্তীতে গবেষণা দল এই সাইটগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং এ ব্যবস্থাটি জন-বান্ধব করার জন্য স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নেতাদের সাথে বিভিন্ন পরামর্শ সভার আয়োজন করে। সারাদেশে এই ব্যবস্থাটি কার্যকর করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করবে।

এই প্রকল্পে নিয়োজিত এফএও এর পরামর্শক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূমিধ্বস বিশেষজ্ঞ ডা. বায়েস আহমেদ বলেন, “এই ব্যবস্থাটি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, ভূমিধ্বসের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের উপগ্রহ চিত্র, বৃষ্টিপাতের মাত্রা এবং ওই এলাকায় পূর্বে সংঘটিত ভূমিধ্বসের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে পূর্ব-সতর্কবার্তা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তখন ইমেইল বা ফোনের মাধ্যমে এই বার্তা পান।”

সতর্কতা ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য ভূমিধ্বসের সাথে সম্পর্কিত প্রস্তুতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রধান বাধাসমূহ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি আলোচনার জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের পরামর্শ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতা এবং কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবকরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের এফএও সাব অফিসের প্রধান মার্কো দে গায়েতানো, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রতিনিধি রকিবুল আমিন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. সোলায়মান হায়দার।

কর্মশালায় প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে কয়েক মাসের মধ্যে চালু হতে যাওয়া ভূমিধ্বসের এই নতুন পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থাটি কার্যকর করার লক্ষে স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী-এই তিন-স্তরের কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, ঝুঁকিপূর্ণ, ভূমিধসে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন