কক্সবাজার ডিসি অফিসে যুবকের মাতলামি

fec-image

মদ খেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, মাতলামি ও ডিসি অফিসের সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে আবদুল আমিন প্রকাশ মংগা নামের এক যুবক। যদিও তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন বলে জানাগেছে।

বুধবার (২০এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পরভেজের দপ্তরে ভিতরে সেবাপ্রার্থীদের সামনে এমন ঘটনা ঘটে।

আব্দুল আমিন প্রকাশ মংগার টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর বাহারছড়ার বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হঠাৎ এডিসির কক্ষে প্রবেশ করে মংগা। এরপর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আমাকে এখন টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে ডিসি-মিসি সবাইকে দেখে নেবো।

এসময় তাকে কয়েকজন মিলে থামানোর চেষ্টা করলে তিনি সবাইকে উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন সেবাপ্রার্থী ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইলে এডিসি আমিন আল পারভেজ ওই যুবক মানসিকভাবে অসুস্থ জানিয়ে তাদেরকে নিষেধ করেন। তার মুখ থেকে মদের গন্ধ বের হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

কিন্তু পরে সে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে বের হয়ে উল্টো তাকে মারধর করা হয়েছে অভিযোগ তুলে অপপ্রচার চালিয়ে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল আমিন প্রকাশ মংগা একটা ভুয়া পাওয়ার অফ এটর্নি নিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডে অধিগ্রহণের বড় ডেইল মৌজার কিছু দাগে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু তার দেওয়া দলিলটা ভুয়া, রেজিষ্ট্রি অফিসে নাই। সাব রেজিস্ট্রার অফিসেও চিঠি দিয়ে জানিয়েছে এ দলিলের কোন অস্থিত্ব নাই।

সর্বশেষ বুধবার এল.এ অফিসার নিজে গিয়ে রেকর্ড রুমে যাচাই করে দেখেছেন। ভুয়া দলিল হওয়ায় রেকর্ড রুমে এ দলিলের অস্তিত্ব কোন পাননি তিনি। এ খবর জানার পর মদ খেয়ে মাতলামি শুরু করেন আব্দুল আমিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফের শাপলাপুর এলাকার আব্দুল আমিন মংগা একই এলাকার জনৈক বেগম বাহার নামক মহিলার নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আমমোক্তারনামা তৈরি করে। পরে সেই আমমোক্তারনামা বাতিল হয়। এই বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে মংগা আদালতে গেলে আদালত বেগম বাহারের পক্ষে রায় দেন। আদালত কর্তৃক বাতিল ঘোষিত আমমোক্তারনামার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ প্রদান সম্ভব নয় মর্মে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়ার পর সে একই নম্বরের ভিন্ন একটি সালের কথিত আমমোক্তারনামার অনুলিপি দাখিল করে ক্ষতিপূরণের অর্থ দাবী করে।

বুধবার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন সরাসরি জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে যাচাই করে জানতে পারেন যে, আব্দুল আমিন মংগা কর্তৃক উপস্থাপিত নতুন আমমোক্তারনামার নামার কোন অস্তিত্ব নেই। এটি জানার পর বিকেল ৫ টার দিকে মংগা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-এর দপ্তরে প্রবেশ করে মদ্যপান অবস্থায় মংগা আমি শুরু করি মাতলামি ও সেবা প্রার্থীদেরও গালিগালাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে যায়, সম্প্রতি রামু উপজেলা থেকে আসা এক কৃষক প্রতারণার মাধ্যমে তার নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে আব্দুল আমিন মংগাকে আটক করে। পরে সে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মুক্তি পায়।

এদিকে মাতলামি করে জেলা প্রশাসনের অফিস থেকে বাইরে গিয়ে আব্দুল আমিন মংগা তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আব্দুল আমিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। পরে ফোন বন্ধ করে দেন।

এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, একটি সরকারি অফিস হিসেবে তার দপ্তর সেবাপ্রার্থীদের জন্য সর্বদা খোলা। এই সুযোগে এই প্রতারক সেখানে আনাগোনা করে। তার বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হবার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এডিসি।

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছে, আব্দুল আমিন ওরফে মংগা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে যে কেউ ৫০০টাকা দিলে ইট দিয়ে মেরে মাথা ফাঁটানোর ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।এ সুযোগে অনেকেই তাকে ব্যবহার করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন