কাঁচামাল সংকটে কেপিএম উৎপাদন বন্ধ, মানবেতর জীবন কাটছে অস্থায়ী শ্রমিকদের

fec-image

এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ কাগজ কলটি আবারও কাঁচামাল ও সরকারি অর্ডার না থাকায় গত ২৪ মে হতে উৎপাদন কার্যক্রম একেবারে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস লি: পার্বত্যজেলা রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলায়  অবস্থিত।

আন্তঃ বিভাগীয়পত্র সূত্রে জানা যায়,২৪ মে হতে উৎপাদন বন্ধ থাকায় পরর্বতী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত অথবা উৎপাদন চালু হওয়া পর্যন্ত সকল পর্যায়ের পে-অফ কর্মকর্তা/কর্মচারী, অস্থায়ী শ্রমিক, কোম্পানী মাস্টার রোল শ্রমিকদের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

এদিকে নির্দেশ মোতাবেক কাজে যোগদান প্রদান না করায় অস্থায়ী শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে শ্রমিক /কর্মচারীরা অভিযোগ করেন।

কেপিএম আবাসিক এলাকায় বসবাসরত স্থায়ী শ্রমিক, কর্মচারীরা অভিযোগ করে জানান, মিল উৎপাদন বন্ধ বা চালু রাখা সেটা সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের বিষয়। কিন্ত আবাসিক এলাকায় তারা বিদ্যুৎ এবং তীব্র পানীয়জলের সংকটে ভুগছে। তারা জানান, রাতে কয়েক ঘণ্টা এবং সকালে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে।

এ ছাড়া দিনে একবার যে পানি সরবরাহ করা হয় সেটা নদীর ঘোলা পানি, যা বিশুদ্ধ না করে সাপ্লাই করা হচ্ছে। ফলে এই করোনাভাইরাস সংকটে পানি ব্যবহার করা তাদের জন্য একেবারে নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন(সিবিত্র) সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু জানান, কাচাঁমাল সংকট এবং বিক্রয় সংকটের ফলে কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ আছে।

তারা জানান, কেপিএম আবাসিক এলাকায় এখন তীব্র পানীয়জল এবং বিদ্যুৎ এর সংকট চলছে। যে কোন সময় ডায়রীয়া‘সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করতে পারে।

এ বিষয়ে কেপিএম ব্যবস্থাপক(উৎপাদন) গোলাম সরোয়ার জানান, বর্তমান কিছু কাঁচামাল সংকট আছে। তাছাড়া কেপিএম হতে কাগজ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল কারিকুলাম ফর টেক্সট বোর্ড(এসিটিবি) কাগজ না কেনায় গত ২৪ মে হতে কেপিএমে উৎপাদন হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, কেপিএম হতে এসসিটিবি ১০০০মেট্রিক টন কাগজ কেনার কথা ছিল। এ প্রতিষ্ঠানটি কাগজ কিনলে এ সংকট থাকবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কেপিএম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা যায়, মিলটি বর্তমানে আমদানিকৃত পাল্প রিসাইকেল পেপার হতে কাগজ উৎপাদন করে আসছে।

চলতি অর্থ বছরের ৯ মে পর্যন্ত বিসিআইসির এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ৫হাজার ৭৮৫মেট্রিক টন পর্যন্ত কাগজ উৎপাদন করছে। তবে সরকারি কাগজ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি যদি কেপিএম হতে কাগজ কিনে তাহলে এ সংকট আর থাকবে না বলে তারা জানান।

বিসিআইসির এ প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩০হাজার মেট্রিক টন হলেও বর্তমানে বার্ষিক ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনের ফলে এটি একটি লোকসানে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান।

মিলে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, যদি দৈনিক ৪৫ হতে ৫ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন হয় তাহলে মিলটি আর লোকসান গুনতে হবে না।

তারা আরো জানান, বর্তমানে যে যন্ত্রপাতি আছে তা দিয়ে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন করা যেতো। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিম্ন মানের কাগজ উৎপাদনের ফলে এনসিটিবি সহ সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এ মিলটি হতে কাগজ কিনতে আগ্রহ হচ্ছেনা বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে সিবিত্র নেতৃবৃন্দর বক্তব্য জানতে চাইলে তারা বিষয়গুলোর সত্যতা স্বীকার করে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, কেপিএম, চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন