কাউখালীতে প্রার্থীরা গভীর রাত পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ

Kawkhali UP Election News Pic
কাউখালী প্রতিনিধি :
আগামী ৪ জুন শনিবার রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। বেতবুনিয়া, ঘাগড়া, কলমপতি, ফটিকছড়ি চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কাউখালী উপজেলা। ইউনিয়ন চারটি হলেও ফটিকছড়ি ইউনিয়নে ইউপিডিএফ সমর্থনে চেয়ারম্যান প্রাথী ও চার জন ইউপি সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বার্চিত হয়েছেন। ফলে স্বাভবতই তিন ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সর্বত্র প্রচার প্রচার-প্রচারণা ততই তুঙ্গে উঠছে। ক্রমশ উত্তাপ ছাড়াতে শুরু করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। পোষ্টার ও ব্যানার ছেড়া ব্যতীত বড় ধরনের কোন অভিযোগ আপাতত লক্ষ করা যায়নি। প্রচারের ক্ষেত্রেও বাঁধা বিপত্তির খবর পাওয়া যায়নি।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেরাচ্ছেন। পাহাড় বেষ্টিত কাউখালী উপজেলায় প্রার্থীদের প্রচারণার ক্ষেত্রে বাড়তি ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। কারণ বেশীরভাগ ভোটার এলাকাই দূর্গম অঞ্চলে। যারা বর্তমান চেয়ারম্যান মেম্বার রয়েছেন তারা তাদের অতীতের সকল কিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে আগামীতে সকলের উন্নয়ন নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইছেন। তবে ভোটাররাও চতুরতায় পিছিয়ে নেই, কোন প্রার্থীকেই তারা নৈরাশ করছেন না।

সব ঠিকঠাক থাকলে ৪ জুন উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রথম বারের মত দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও ফটিকছড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত  হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ধন কুমার চাকমা। বাকী তিন ইউনিয়নের মধ্যে বেতবুনিয়া ইউনিয়নে তিনজন, কলমপতি ইউনিয়নে দুজন ও ঘাগড়া ইউনিয়নে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি জেলায় প্রবেশ দ্বারে কাউখালী উপজেলার অবস্থান হওয়ার কারণে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নজরদারী কাউখালীর দিকে একটু বেশি।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ইউপি নির্বাচন চতুর্থ ধাপে হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন কমিশন তা পিছিয়ে ষষ্ট ধাপে নিয়ে আসে। ফলে প্রার্থীদের একটি বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয়। সে সাথে খরচের বাজেটটাও বাড়াতে হয়েছে প্রার্থীদের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, বাছাই ও প্রতীক পাওয়ার পর থেকে পুরো উপজেলায় প্রার্থীরা ভোটারদের সাথে মতবিনিময় করছেন। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট চাইছেন দোয়া। সাধারণ ভোটারদের নিজেদের দিকে ভেড়াতে চলছে গ্রামে গ্রামে উঠোন বৈঠক, চলছে চা চক্র। চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের চলছে বিরামহীন প্রচারণা। হাট বাজার, স্টেশন, অলিগলিতে নির্বাচনী পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। সর্বক্ষেত্রে  প্রার্থীরা জাতীয় রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জোর  তৎপরতা চালাচ্ছেন।

কাউখালী উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কাউখালী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪১ হাজার ৫৯২ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ২১ হাজার ২৬৯ জন এবং মহিলা ভোটার ২০ হাজার ৩২৩ জন। তারমধ্যে ঘাগড়া ইউনিয়নে ১৬ হাজার ২৮২ জন, বেতবুনিয়া ইউনিয়নে ১১ হাজার ৭৮৯ জন, ফটিকছড়ি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬২৬ জন, কলমপতি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৮৯৫ জন। উপজেলার ৩৮টি ভোট কেন্দ্রের ১৩৩টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ভোটাররা।

বেতবুনিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগ সমর্থিত খইচাবাই তালুকদার (নৌকা), বিএনপি সমর্থিত মো. শওকত হোসাইন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাকির হোসেন (আনারস)। কলমপতি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান ক্যজাই মার্মা (নৌকা), বিএনপি সমর্থিত কাঊখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাক জাহাঙ্গীর হোসেন (ধানের শীষ), ঘাগড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন, আওযামীলীগ সমর্থিত কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মো. বেলাল উদ্দিন, বিএনপি সমর্থিত কাউখালী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম, ইউপিডিএফ সমর্থিত জগদীশ চাকমা (আনারস), জেএসএস সমর্থিত শান্তি মনি চাকমা (ঘোড়া)।

সুত্র জানায় চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা  নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যারম্যান প্রার্থীর সাথে আলাপকালে তারা জানান নির্বাচিত হলে জনগণের কল্যাণ এবং উন্নয়নের জন্য তারা কাজ করে যাবেন। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এবার তারা দেখেশুনে ভোট দেবেন। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় অনেকে মুখ খুলতেও নারাজ।

কাউখালী  উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আকতার জানিয়েছেন, কোন এলাকায় যে কোন সহিংস ঘটনা বা নির্বাচন আচরন বিধি লংঘনের সংবাদ পাওয়া মাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে তার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস,এম চৌধুরী জানিয়েছেন, কাউখালী উপজেলায় অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন