কেউ অপহরণ করেনি, আনোয়ারের প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছি: থানায় এসে জানাল ‘নিখোঁজ’ বাপ্পী ত্রিপুরা
রামগড় প্রতিনিধি:
ফটিকছড়ির ভূজপুর থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়া বাপ্পী রানী ত্রিপুরা (১৬) দীর্ঘ ১৯ দিন পর গত শনিবার রাতে ভুজপুর থানায় হাজির হয়েছে। সে থানায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুলিশকে জানায়, কেউ তাকে অপহরণ কিংবা জোরপূর্বক নিয়ে যায় নি। সে স্বেচ্ছায় প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছে।
সে আরও জানায়, বিষয়টি তার পরিবার জানলেও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের চাপেরমুখে ভুজপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে অপহরণ মামলা করেছেন ।
এদিকে রবিবার পুলিশ বাপ্পি ত্রিপুরাকে চট্টগ্রাম চীফ জ্যুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেট তার বক্তব্য শুনার পর তাকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাপ্পি ত্রিপুরা তার মা,বাবার কাছে ফিরে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে আদালত তাকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার এ আদেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পুলিশ গত শুক্রবার রাতে বাপ্পির কথিত প্রেমিক আনোয়ারের মা মহিলা ইউপি সদস্যা রহিমা বেগমকে ভুজপুর থানায় এনে বাপ্পি ত্রিপুরার সন্ধান দিতে চাপ দেয়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ি শনিবার পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে আনোয়ারের বন্ধু বাগানবাজার ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের জনৈক সিরাজ সরদারের পুত্র জহিরুল আলমকে গ্রেফতার করে।
সূত্র জানায়, আনোয়ারের মা থানায় আটক ও জহিরকে গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পরই বাপ্পি ত্রিপুরা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভুজপুর থানায় হাজির হয়। বাপ্পি পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যে জানায়, সে এতদিন রাঙামাটির লংগদুতে তার এক আত্মীয়র বাড়িতে ছিল। বিজিবি সদস্য আনোয়ারের সাথে তার বিয়ে হয়েছে বলেও সে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার নারায়নহাট ইউনিয়নের ধামারখীল গ্রামের মৌচাং রায় ত্রিপুরার মেয়ে বাপ্পী ত্রিপুরা। এ বছর স্থানীয় নারায়নহাট স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয় বাপ্পী। তাদের বাড়ির পাশেই প্রবাসী শেখ ফরিদের বাড়িতে টিউশনি করতো বাপ্পী। সন্ধ্যায় টিউশনি করতে যাবে বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সে। পর দিন ২৫ ফেব্রুয়ারী ভূজপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন তার বড় ভাই সুমন ত্রিপুরা।
গত ২ মার্চ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম, আদিবাসি ফোরাম ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বাপ্পীর নিখোঁজ হওয়ার কারণ অনুসন্ধনে ভুজপুরে আসেন। তাদের পরামর্শে নিখোঁজের ৬দিন পর ২ মার্চ বাপ্পি ত্রিপুরার ভাই সুমন ত্রিপুরা বাদি হয়ে ভুজপুর থানায় অজ্ঞানামা ব্যক্তিদের আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এর পর পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, আনোয়ারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বাপ্পীর। বাপ্পীর ভাই বাবুল ত্রিপুরার সাথে বিজিবিতে ট্রেনিং করে কর্মস্থলে যোগ দেন আনোয়ার। বন্ধুত্বের সুবাদে বাপ্পীর বড় ভাই সুমনের বিয়েতে যায় আনোয়ার। এরপর বেশ কয়েকবার আসা যাওয়া হয় বাপ্পীদের বাড়িতে। গত প্রায় ছ’মাস ধরে সম্পর্ক চলে আসছিল বাপ্পী আনোয়ারের।
বাপ্পীর আরেক ভাই বাবলু জানায়, আনোয়ার বাপ্পীকে মোবাইল ফোনও কিনে দেয়।
এদিকে পুলিশকে দেয়া বাপ্পিকে বিয়ে করার দাবীর ব্যাপারে আনোয়ারের বক্তব্য পাওয়া যায় নি । তবে বিজিবি সদস্য আনোয়ারের মা ইউপি সদস্য রহিমা বেগম বলেন, তাঁর ছেলের সাথে বাপ্পীর কোন সম্পর্ক নেই। ঘটনার দিন তাঁর ছেলে কর্মস্থলেই ছিল। তাকে পারিবারিক ভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই ছেলের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।