কেন্দ্রের সংস্কার দাবী- জেলার বাতিল: ভূমি কমিশন নিয়ে ছাত্র ও নাগরিক পরিষদের মতানৈক্য সুস্পষ্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি, পার্বত্য নিউজ:
পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সরকারের কাছে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব পেশ করার ৫ দিনের মাথায় রাঙামাটির জেলা কমিটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করে বহুল বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন- ২০১৩ বাতিলের দাবী জানিয়েছে- যা মূলত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক। সোমবার রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ জেলা কমিটি এ বাতিল দাবী জানায়।
এর আগে মাত্র ৫ দিন আগে অর্থাৎ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আহবানে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পার্বত্য নাগরিক কমিটি ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ১০টি শর্ত সাপেক্ষে বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন ২০১৩ সংস্কারের দাবী জানায়। এ দাবী সমূহ প্রকারান্তরে পার্বত্য ভূমি কমিশন মেনে নেয়ার শামিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের আপামর বাঙালী জনগোষ্ঠী এ সংস্কার প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি। তারা ছাত্র পরিষদ ও নাগরিক পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায়। বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনামূলক রিপোর্ট ছাপা হয়। বাঙালী ছাত্র পরিষদের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমে ফোন করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কথা জানায়। সোমবারের সমাবেশে ছাত্র পরিষদ নেতৃবৃন্দের ভূমি কমিশন বাতিলের দাবী সে ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। তবে পার্বত্য বাঙালীদের বেশিরভাগই বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও নাগরিক পরিষদ জেলা নেতৃবৃন্দের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।
এদিকে কয়েকজন বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের এহেন কর্মকান্ডে বিভ্রান্তিতে পড়েছে পার্বত্যাঞ্চলে আন্দোলনরত অন্য বাঙ্গালী সংগঠনগুলো। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি পেয়ার আহাম্মদ খান জানান, যেখানে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ শান্তিচুক্তিকে একটি অসাংবিধানিক ও রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি আখ্যায়িত করে এর বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিলের রায় দিয়েছেন। কিন্তু এটা না করেই প্রশ্নবিদ্ধ চুক্তিরই আলোকে বর্তমান সরকারের তৈরিকৃত বহুল বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন- ২০১৩ কে শর্ত সাপেক্ষে মেনে নেওয়া কোনো দেশ প্রেমের লক্ষণ হতে পারেনা। পার্বত্যবাসী তাদের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বরং তারা পার্বত্য জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আর এটা বুঝতে পেরেই নাগরিক পরিষদ ও বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে এসে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে আইনটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। যা তাদের ভূমিকা’কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
অন্যদিকে পার্বত্য সম-অধিকার ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সভাপতি আল আমিন ইমরান জানান, পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন- ২০১৩ সম্পর্কে সম্পুর্ণরূপে না জেনে নিজেদের অজ্ঞতার পরিচয় বহন স্বরূপ আমাদের কিছু বিপথগামী নেতৃবৃন্দ ঢাকা গিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু পরক্ষণেই তারা বুঝতে পেরেছেন যে পার্বত্যবাসি তাদের এহেন সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই মেনে নেবেনা। তাই তারা নিজেদের রক্ষা করার জন্যই আজকের এই কর্মসূচিতে বাতিল দাবী করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছি, সবাই কিন্তু পার্বত্যবাসির প্রতিনিধিত্ব করছি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমরা সাধারণ বাঙ্গালীদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবো। আর এরকম হলে পার্বত্যবাসি আমাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবেনা।