কোটায় দুই বোন প্রাইমারী শিক্ষক প্রতিবেশীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ চুরি করে ব্যবহারের অভিযোগ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ প্রাপ্ত সহোদর দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ চুরি করে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবদুল রহমান নামে প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম এ অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্তরা  হলেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জয়নাল আবেদীনের দুই কন্যা

ফুল বানু (রোল নং ৮৬৩) ও পারুল আক্তার শ্রাবন্তী (রোল নং ৯২৮)। এরা উভয়েই আবদুল রহমান নামে এক মৃত মুক্তিযোদ্ধার কন্যার ঘরের নাতনী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল রহমানের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম জানান, তার স্বামীর সনদ ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছেন ওই দুই বোন। অথচ তারা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল রহমানের কোন আত্মীয় নন, তাদের সাথে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোন ধরনের সম্পর্কই নেই। আম্বিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আম্বিয়া বেগমের সতীনের ছেলেকে দিয়ে সনদটি চুরি করার পর তা ব্যবহার করেছে।এর আগে একবার  নিয়োগপ্রাপ্ত ফুল বানু ও পারুলের পিতা তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জয়নাল আবেদীন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদটি নেয়ার জন্য তাকে নগদ অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে তিনি রাজী হননি বলেও জানান।

অভিযোগ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, এ বিষয়ে ‘সম্পর্ক সনদ’ দেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা সেই সনদের উপর ভিত্তি করেই যাচাই-বাছাই করেছেন। যদি অভিযোগটি সত্য হয় তবে তার দায়ভার ‘সম্পর্ক সনদ’ প্রত্যয়নকারী চেয়ারম্যানের। এছাড়া এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ওই দুই বোনের ‘সম্পর্ক সনদ’ ঘেটে দেখা যায় ২০১২ সালের ২৪ অক্টোবর সনদটি প্রত্যয়ন করা হয়। আর সেই সনদের প্রত্যয়নকারী ছিলেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতী ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. মনছুর আলী। তাতে প্রত্যয়ন করা হয় যে, ওই দুই বোনের সাথে মুক্তিযোদ্ধা আঃ রহমানের নানা-নাতনীর সম্পর্ক।

তবে নিয়োগপ্রাপ্ত ফুল বানু ও পারুলের পিতা জয়নাল আবেদীন জানান আব্দুর রহমান নিয়োগপ্রাপ্তদের দাদার নাম। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার আসল নাম আব্দুর রহমান, এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তবে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন।’ এছাড়া নিজের দাদার নাম অর্থাৎ আব্দুর রহমানের পিতার নাম জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার দাদার নামটা এ মুহূর্তে মনে আসছেনা।’

এদিকে স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, পিতা জয়নাল আবেদীনের পিতার নাম রুস্তম আলী ওরফে লুতু মিয়া। এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘সম্পর্ক সনদ’ প্রত্যয়নকারী চেয়ারম্যান মো. মনছুর আলী বলেন, ‘সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদীনের পিতা মুক্তিযোদ্ধা ছিলো কিনা তা আমার জানা নেই। সুতরাং তার মেয়েদের ‘সম্পর্ক সনদ’ প্রত্যয়ন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি আমার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ব্যবহার করে থাকে তবে সেটা অবশ্যই জাল। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে টাকা দিয়ে হয়তো তারা ভূয়া সনদ তৈরি করে নিয়েছে।’

তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তসহকারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের জেলা কমান্ডার রইছ উদ্দিন। ভবিষ্যতে যেনো এমন জালিয়াতি আর কেউ কখনো করতে সাহস না পায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন